জাদু ফিরছে! ডায়নামো, টিউটোরিয়াল আর চাঞ্চল্যকর খবর!

জাদুকরদের জাদু আবার ফিরছে, টেলিভিশনের পর্দায় ঝলমলে পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে তাদের কোটি কোটি ভক্ত—আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন জাদু।

প্রাচীন মিশরে, খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে ডেডি নামের এক জাদুকরের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিল দর্শককুল। এরপর সময়ের পরিক্রমায়, জাদু তার আকর্ষণ হারায়নি, বরং নতুন রূপে ফিরে এসেছে।

টিভি ট্যালেন্ট শো এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। আজকাল ইউটিউব এবং টিকটকে নানান ধরনের জাদুর কৌশল শেখানো হয়, যা দেখে অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন।

যারা আগে জাদুকে নিছক বিনোদন হিসেবে দেখতেন, তারাও এখন এর গভীরে প্রবেশ করতে চাইছেন।

একসময় জাদুকরদের জগৎ ছিল বেশ গোপনীয়। এমনকি, জাদুবিদ্যার গোপন রহস্য প্রকাশ করলে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।

এমনকি, নারী সদস্যদের জন্য ‘ম্যাজিক সার্কেল’ -এর দরজা ছিল বন্ধ। তবে, সেই ধারণা এখন অতীত।

উদাহরণস্বরূপ, সোফি লয়েড নামক এক নারী, যিনি পুরুষ সেজে ‘ম্যাজিক সার্কেল’-এ যোগ দিয়েছিলেন, সম্প্রতি তাকে আবার এই সার্কেলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেনে প্রায়ই দেখা যায়, নামী-অনামী জাদুকররা তাদের কৌশল দেখাচ্ছেন।

তাদের মধ্যে অন্যতম, ২৭ বছর বয়সী ক্যামেরন ক্লার্ক। ছোটবেলায় দাদার কাছ থেকে পাওয়া একটি ম্যাজিক কিট-এর মাধ্যমেই তার এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।

তিনি জানান, টেলিভিশন শো ‘ডায়নামো’ -র সাফল্যের পর জাদু আবার জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।

এছাড়াও, নাথান আর্ল নামের ২৯ বছর বয়সী এক জাদুকর জানান, ১৪ বছর বয়সে তার জাদু শেখার আগ্রহ জন্মেছিল।

তিনি বলেন, “কলেজের এক বন্ধু আমাকে জাদুশিল্পী হওয়ার পরামর্শ দেয়, কারণ তার মতে, এটি আমার চরিত্রের সঙ্গে মানানসই ছিল।”

তিনি মনে করেন, আধুনিক সময়ে এই শিল্পের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, পথশিল্পী হওয়াটা একজন জাদুকরের জন্য অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা।

‘ম্যাজিক সার্কেল’-এর প্রথম নারী চেয়ার, লরা লন্ডন জানান, এই পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা খুবই ইতিবাচক।

বর্তমানে এই সংগঠনের ১,৭০০ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ নারী এবং তরুণদের ক্লাব ‘ম্যাজিশিয়ান্স ক্লাব’-এর ১৫ শতাংশ সদস্যই নারী।

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের ‘ম্যাজিক সোসাইটি’-র সেক্রেটারি, ২১ বছর বয়সী স্যামুয়েল স্টিফেন্স বলেন, “আমাদের সদস্যরা খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ।

বর্তমানে আমাদের ৩২ জন সদস্য রয়েছে, যাদের অর্ধেক নারী এবং বেশ কয়েকজন এলজিবিটি সদস্য।”

আগের প্রজন্মের মানুষজন হয়তো পেন ও টেলার অথবা পল ড্যানিয়েলসের জাদু উপভোগ করতেন, কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্মের কাছে ইউটিউব এবং টিকটকের জাদুকরেরা বেশি পরিচিত।

জনি ক্ল্যাভো নামের এক সদস্য বলেন, “সাধারণত, ইউটিউব বা টিকটকে কোনো জাদুকরের কাজ দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয় এবং জাদু শিখতে চায়।”

আগের দিনে বড় মঞ্চে জাদুকরদের নানান কৌশল দেখা যেত, কিন্তু এখনকার তরুণরা ছোট আকারের জাদু, যেমন— কার্ড ও কয়েন নিয়ে খেলা বেশি পছন্দ করে।

স্যামুয়েল স্টিফেন্সের মতে, “ছোট আকারের জাদু শেখা সহজ এবং এটি দর্শকদের কাছেও বেশি উপভোগ্য।”

সব মিলিয়ে, জাদুকরদের এই নতুন যাত্রা একদিকে যেমন ঐতিহ্যকে ধরে রাখছে, তেমনই নতুন প্রজন্মের জন্য খুলে দিচ্ছে আরও অনেক সম্ভাবনা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *