**বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন কার্লসেন: ডিজিটাল যুগে খেলার নতুন দিগন্ত**
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন মনে করেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে দাবা খেলার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। খেলাটি এখন ই-স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, যা এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ‘ইস্পোর্টস ওয়ার্ল্ড কাপ’ (EWC)-এ দাবা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে।
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টটি মূলত ই-স্পোর্টসের একটি বড় আয়োজন, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে পেশাদার গেমার, প্রকাশক এবং ভক্তরা একত্রিত হন। ২০২৩ সালে প্রথমবার এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
২০২৪ সালের সংস্করণে দাবা যুক্ত হওয়ার ফলে এর আকর্ষণ আরও বেড়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য ছিল প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরস্কার।
দাবা খেলার এই নতুন দিগন্তে প্রবেশের জন্য শীর্ষস্থানীয় ই-স্পোর্টস দলগুলো সেরা দাবাড়ুদের দলে ভেড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি দল ‘টিম লিকুইড’।
তারা নরওয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে দলে নিয়েছে। কার্লসেন নিজেও EWC-এর একজন দূত হিসেবে কাজ করছেন।
CNN-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কার্লসেন বলেন, “আমার মনে হয়, দাবা খেলার জন্য এটা একটা বিশাল মুহূর্ত। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যখন সরাসরি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব ছিল না, তখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খেলার প্রবণতা বাড়ে।
অনলাইন টুর্নামেন্টগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এখন আমরা হাইব্রিড ইভেন্ট দেখছি।”
ঐতিহ্যবাহী দাবা খেলার পাশাপাশি, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খেলার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। EWC-এর প্রতিযোগিতায় দ্রুত গতির ই-স্পোর্টসের উপাদান যুক্ত করে খেলার একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, ‘১০+০’ ফরম্যাট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়রা প্রতি চালে ১০ মিনিট সময় পাবেন এবং অতিরিক্ত সময় যোগ করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
এই ধরনের পরিবর্তনে খেলার গতি বাড়ে এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে ভুল করার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
কার্লসেনের মতে, “দাবা খেলাটা একদিকে যেমন একটি প্রাচীন খেলা, তেমনই ডিজিটাল যুগের সঙ্গে মানানসই। অনলাইনে খেলাটা সহজ বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
আমি যখন অনুশীলন করি, তখন ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটে খেলি। টুর্নামেন্টে যখন সরাসরি খেলতে বসি, তখন বোর্ডের চিত্রটা যেন একটু অন্যরকম লাগে।”
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন (FIDE) ক্লাসিক দাবা খেলার মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে পরিচিত। FIDE-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমিল সুতোভস্কি জানিয়েছেন, তারা ই-স্পোর্টসের সঙ্গে এই অংশীদারিত্বকে সমর্থন করেন।
Chess.com-এর মতো প্ল্যাটফর্ম দাবাকে অনলাইনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা খেলোয়াড়দের জন্য সারা বিশ্ব থেকে দাবা খেলার সুযোগ তৈরি করেছে।
কার্লসেন মনে করেন, ডিজিটাল জগৎ দাবাকে নতুন দর্শকদের কাছে আরও সহজলভ্য করেছে। তিনি আরও বলেন, “তথ্য সহজলভ্য হওয়ায় খেলাটি ভক্তদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়েছে।
এখন এমন ইঞ্জিন রয়েছে যা খেলার কৌশল দেখাতে পারে এবং খেলাটিকে আরও সহজ করে তোলে। তরুণ প্রজন্মের দাবা খেলোয়াড়দের উন্নতি হচ্ছে, তাই এটা সত্যিই একটি দারুণ সময়।”
EWC-এর দাবা প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সেমিফাইনালে গ্র্যান্ড মাস্টার হিকারু নাকামুরার বিরুদ্ধে জয়লাভ করে কার্লসেন ফাইনালে পৌঁছেছেন।
ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ হলেন গ্র্যান্ড মাস্টার আলিরেজা ফিরোজজা। বিজয়ী খেলোয়াড় ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২ কোটি ৬৩ লক্ষ বাংলাদেশী টাকা) পুরস্কার হিসেবে পাবেন।
তথ্য সূত্র: CNN