মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুতকৃত এই প্রতিবেদনে খাদ্যভ্যাস, পরিবেশ দূষণ এবং ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে নেতৃত্বদানকারী স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র জানিয়েছেন, শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত বিষাক্ততা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং ওষুধের ব্যবহার প্রধান ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও জানান, এই বিষয়ক নীতি নির্ধারণের জন্য আগামী ১০০ দিনের মধ্যে একটি কৌশল তৈরি করা হবে।
প্রতিবেদনে শিশুদের টিকা দেওয়ার সময়সূচী পর্যালোচনা করা, প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবারের বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা এবং বাণিজ্যিক কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশকগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, এই প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশ নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রস্তাব নিয়ে কৃষক ও খাদ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে, অটিজম বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরাও কেনেডির কিছু ধারণার বিরোধিতা করেছেন। কেনেডি মনে করেন, পরিবেশগত এবং ঔষধসংক্রান্ত কারণের কারণে অটিজম বাড়ছে। যদিও প্রতিবেদনে সরাসরি টিকার সঙ্গে অটিজমের যোগসূত্র স্থাপন করা হয়নি, তবে অনেক অভিভাবক শিশুদের টিকা এবং তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ঔষধ, বিশেষ করে এডিএইচডি (ADHD), বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগের ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। স্বাস্থ্যখাতে কিছু “ভুল” ধারণার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও, পরিবেশগত প্রভাবের দিক থেকেও কিছু উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, অ্যাট্রাজিন এবং গ্লাইফোসেট-ভিত্তিক আগাছানাশক, যা রাউন্ডআপ (RoundUp) নামে পরিচিত, সেগুলোর ব্যবহার বিভিন্ন অসুস্থতা, যেমন প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, ক্যান্সার এবং লিভারের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
তবে, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) এবং পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA) জানিয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন মেনেই খাদ্য উৎপাদন করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিশুরা অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত শস্য, চিনি এবং ফ্যাট গ্রহণ করে, যা তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। খাদ্য প্রস্তুতকারকদের ব্যবহৃত কিছু কৃত্রিম উপাদান, যেমন—মিষ্টি এবং প্রিজারভেটিভও দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে। তাই, খাদ্য উপাদানগুলির উপর নতুন করে গবেষণা করার এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোতে কর্পোরেট প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো কীভাবে লবিং এবং রোগী বিষয়ক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে আইনকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হলেও, এর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং শিশুদের সুস্থ জীবন নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে।
তথ্য সূত্র: CNN