চিকিৎসকদের অবহেলা! মেয়েদের গোপন ব্যথায় গ্যাসলাইটিং, আসল কারণ জানেন?

নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক কষ্টের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বরং অবহেলা করা হয়।

চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘মেডিকেল গ্যাসলাইটিং’ বলা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় এই বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহিলাদের কিছু দীর্ঘমেয়াদী গাইনিকোলজিক্যাল সমস্যা, যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস বা যোনিপথে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হলে, অনেক সময় চিকিৎসকদের কাছ থেকে অসহযোগিতা ও ভুল বোঝাবুঝি হতে দেখা যায়।

এইসব পরিস্থিতিতে রোগীরা মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এন্ডোমেট্রিওসিস এবং ভালভোডাইনিয়ার মতো সমস্যাগুলি, যা প্রায় ১ জন মহিলার মধ্যে ১০ জনের হয়ে থাকে, এর কারণে গুরুতর ব্যথা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, মাসিক ঋতুস্রাবের সময়, সহবাসের সময় অথবা অন্তর্বাস পরার মতো দৈনন্দিন কাজগুলোও কষ্টকর হয়ে ওঠে।

কিন্তু অনেক নারীই যখন এই ধরনের সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিতে যান, তখন তাদের অভিযোগগুলি অনেক সময় সন্দেহের চোখে দেখা হয়। অনেক চিকিৎসক তাঁদের শারীরিক কষ্টের কারণটিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন অথবা গুরুত্ব দেন না।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যোনিপথে ব্যথার শিকার হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশকে ডাক্তাররা বলেছেন, ‘আপনার একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার’। এছাড়া, ৩৯ শতাংশ রোগীর এমন ধারণা হয়েছে যে, তারা হয়তো ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’।

এমনকি, এই ধরনের সমস্যার কারণে চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভেবেছেন এমন রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

চিকিৎসকদের এমন মনোভাবের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দের অভাবকে একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এছাড়া, নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলি সম্পর্কে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতীতে মহিলাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখার প্রবণতা ছিল, যার ফলস্বরূপ আজও অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক কষ্টের কারণগুলি এড়িয়ে যাওয়া হয়।

চিকিৎসকদের এই ধরনের আচরণে রোগীরা হতাশ হয়ে পড়েন। অনেক সময় তাঁরা নিজেদের শারীরিক কষ্ট সম্পর্কে সন্দেহ করতে শুরু করেন এবং একাকীত্ব অনুভব করেন।

এর ফলস্বরূপ, উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক আঘাতের মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, চিকিৎসকদের এমন মনোভাবের কারণে রোগীরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা বোধ করেন।

এই সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাঁদেরকে নারী স্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।

রোগীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তাঁদের অভিজ্ঞতার প্রতি সম্মান জানানো দরকার। একইসঙ্গে, নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাগুলিতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন, যাতে এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা যায়।

যদি কোনো নারী এমন পরিস্থিতির শিকার হন, তবে তিনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।

তিনি তাঁর সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট এবং বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া, সহায়তা ও পরামর্শের জন্য নির্ভরযোগ্য সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

এর মাধ্যমে, তিনি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *