গানের সুরে মুগ্ধতা: মাহলারের অজানা জগৎ!

মাহলারের গান: সুরের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের অনুরাগী, অস্ট্রিয়ান সুরকার গুস্টাভ মাহলারের (Gustav Mahler) নাম অতি পরিচিত। তাঁর বিশাল আকারের অর্কেস্ট্রা সিম্ফনিগুলির (orchestral symphonies) পাশাপাশি, মাহলারের গানগুলিও সঙ্গীতের এক অমূল্য সম্পদ।

সম্প্রতি, আমস্টারডামের কনসার্টgebouw-এ (Concertgebouw) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি বিশেষ মাহলার উৎসব, যেখানে তাঁর সুরের এই দিকটির প্রতিও আলোকপাত করা হবে।

মাহলারের গানগুলি তাঁর বিশাল সিম্ফনিগুলির মতোই গভীর এবং শক্তিশালী। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, তাঁর গানগুলি যেন ছোট আকারের মাস্টারপিস, যা শুবার্ট, শুম্যান, ব্রামস এবং উল্ফের (Schubert, Schumann, Brahms, Wolf) শ্রেষ্ঠ কাজগুলির সমতুল্য।

এই গানগুলিতে প্রেম, প্রকৃতি, জীবনের গভীরতা এবং আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ চিত্র ফুটে ওঠে।

গুস্টাভ মাহলারের জন্ম ১৮৬০ সালে, বর্তমানে যা চেক প্রজাতন্ত্রের অংশ। তিনি একাধারে সুরকার এবং কন্ডাক্টর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

তাঁর সঙ্গীতের উপর জার্মান লোকসংগীত এবং রোমান্টিক কবিতার গভীর প্রভাব ছিল। বিশেষ করে, “Des Knaben Wunderhorn” নামক লোক কবিতার সংকলন থেকে তিনি তাঁর গানের জন্য অনেক উপাদান সংগ্রহ করেছেন।

“লাইডার আইনার ফাহরেন্ডেন গেসেলেন” (Lieder eines fahrenden Gesellen), “রুকর্ট-লাইডার” (Rückert-Lieder), এবং “কিন্ডারটোটেনলাইডার” (Kindertotenlieder) -এর মতো গানগুলি আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মন জয় করে।

মাহলারের গানের একটি বিশেষত্ব হলো, তিনি তাঁর কিছু গানকে সিম্ফনির (symphony) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, তাঁর প্রথম সিম্ফনিতে “লাইডার আইনার ফাহরেন্ডেন গেসেলেন” -এর একটি অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ সিম্ফনিতে কণ্ঠশিল্পীদের (vocalists) অর্কেস্ট্রার সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে “ডেস নাবেন ভান্ডারহর্ন” থেকে নেওয়া গানগুলি ব্যবহার করা হয়েছে।

মাহলারের জীবনের শেষ দিকের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো “ডাস লিড ফন ডের এর্দে” (Das Lied von der Erde) বা “পৃথিবীর গান”।

এটিকে তিনি “কণ্ঠ সিম্ফনি” (vocal symphony) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই কাজের জন্য তিনি চীনের প্রাচীন কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

আসন্ন মাহলার উৎসবে, তাঁর গানগুলির মূল আকর্ষণ হলো পিয়ানো এবং কণ্ঠশিল্পীদের পরিবেশনা।

এই উৎসবে বিশ্বখ্যাত শিল্পী এবং অর্কেস্ট্রা অংশ নেবে, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ সুযোগ। কনসার্টgebouw-এর “ক্লাইন স্যাল”-এ (Kleine Saal) অনুষ্ঠিত হবে এই গানগুলির পরিবেশনা।

এই উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, শ্রোতারা মাহলারের সুরের গভীরতা এবং সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

মাহলারের গানগুলি আমাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলে – প্রেম, বিচ্ছেদ, প্রকৃতির সৌন্দর্য, এবং জীবনের গভীরতা।

তাঁর সুরের মাধুর্য আজও মানুষকে মোহিত করে, যা বাংলা গানের জগৎ থেকে অনেক দূরে নয়। রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতিতেও (Rabindra Sangeet or Nazrul Geeti) আমরা এই ধরনের গভীরতা খুঁজে পাই।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *