মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্নাতকের, মাহমুদ খলিলের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা এই ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে।
জানা গেছে, এই শুনানিতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হতে পারে।
মার্চ মাস থেকে আটক থাকা মাহমুদ খলিল একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি, তবে ট্রাম্প প্রশাসন তাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে এবং এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে খলিলের আইনজীবীরা এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে খলিলের আইনজীবীরা তাদের পুরনো আবেদন পুনর্বিবেচনা করবেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন।
তাদের দাবি, খলিলকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনপন্থি সমর্থক হওয়ার কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
আটকের পর থেকে, আরও কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল, তবে তাদের আইনজীবীদের আইনি লড়াইয়ের পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মাহমুদ খলিলের মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
নিউ জার্সির একটি ফেডারেল আদালত এবং লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন আদালতে এই মামলার কার্যক্রম চলছে।
খলিলের আইনজীবী বাহের আজমি সিএনএনকে জানিয়েছেন, “আদালত মাহমুদ খলিলের অবৈধ আটক এবং তার অপসারণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর প্রতি উদ্বেগজনকভাবে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার অভাব দেখিয়েছে।”
খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, সরকার দ্রুত অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে, সম্ভবত ফেডারেল আদালতের হস্তক্ষেপ এড়াতে। আইনজীবীরা মনে করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলাটি দ্রুত শেষ করতে চাইছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে খলিলের আইনজীবীরা তাদের মূল অভিযোগগুলো পুনর্ব্যক্ত করবেন। তাদের দাবি, খলিলের বেআইনি গ্রেফতার সহ, সরকারের পক্ষ থেকে ‘গুরুতর অসদাচরণ’ করা হয়েছে।
তারা নতুন ভিডিও প্রমাণ পেশ করবেন, যা সরকারের এই দাবির বিরোধী যে খলিল পালানোর চেষ্টা করেননি।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রেপ্তারের সময় খলিলকে পালাতে দেখা যায়নি এবং তিনি অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও রাজি ছিলেন।
আবেদন খারিজ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আইনের একটি বিরল ধারা ব্যবহার করছে। তাদের যুক্তি, খলিলের যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিতি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
আদালতে খলিলের চরিত্র সম্পর্কে তার শিক্ষক, সহপাঠী, এমনকি ইহুদি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনসূচক কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
এই নথিগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, খলিলকে যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়, তবে তিনি বিদেশি সরকার বা কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত হতে পারেন।
খলিলের আইনজীবী জনি সিনোডিস সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা সকালে যত বেশি সম্ভব সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করব এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে প্রমাণগুলো দেখাচ্ছে, মাহমুদ গুরুতর ক্ষতির শিকার হতে পারেন।”
বৃহস্পতিবারের শুনানির ফলাফলের উপর নির্ভর না করে, খলিলের আইনজীবীরা অভিবাসন আপিল বোর্ডের কাছে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
একই সময়ে, নিউ জার্সির ফেডারেল আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে, যা ফেডারেল মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে বাধা দেবে।
আটকের পর খলিল তার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি এবং তার সন্তানের জন্মও তিনি মিস করেছেন।
এদিকে, খলিলের স্ত্রী ড. নূর আবদাল্লা ও তাদের নবজাতক সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সেই অনুমতি দেয়নি।
ড. আবদাল্লা বলেছেন, “আমরা আমাদের সন্তানকে নিয়ে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি, যেন তার বাবা তাকে কোলে নিতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের এই অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। এটা শুধু হৃদয়হীনতাই নয়, বরং ইচ্ছাকৃত নিষ্ঠুরতা।”
বৃহস্পতিবারের শুনানির আগে, নিউ জার্সির ফেডারেল আদালতের বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ অভিবাসন কর্মকর্তাদের খলিল, তার আইনজীবী এবং স্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খলিলের এই আটকের ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। তার সমর্থকরা মনে করেন, এটি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন, বিশেষ করে বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী।
তথ্য সূত্র: সিএনএন