মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হতে যাওয়া গ্রাহাম প্লাটনারের পুরনো কিছু সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ডিলিট করা সেই পোস্টগুলোতে তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যুদ্ধ এবং পুলিশের প্রতি কঠোর মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে।
সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, একসময় নিজেকে ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা প্লাটনার, পুলিশকে ‘সবাই’ ‘বাজে লোক’ এবং শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের ‘আসলে’ ‘বর্ণবাদী ও বোকা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
প্লাটনারের পুরনো এই মন্তব্যগুলো তার ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেডডিট প্রোফাইল ‘পি-হাসল’-এর মাধ্যমে করা হয়েছিল। নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগে তিনি সেগুলো ডিলিট করে দেন।
যদিও এই পোস্টগুলো প্লাটনারকে একজন বামপন্থী হিসেবে পরিচিত করে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মেইনের মতো একটি রাজ্যে, যেখানে সাধারণত মধ্যপন্থী ভোটারদের প্রভাব বেশি, সেখানে তার জন্য এটি বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্লাটনার সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ঐ পোস্টগুলো সেই সময়ের যখন তিনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিলেন, সেই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গ্রামীণ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এবং পুলিশ সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত মতামত আর আগের মতো নেই।
প্লাটনার বলেন, “আমি ইন্টারনেটে মজা করছিলাম। আমি চাই না মানুষজন আমার সেই খারাপ মন্তব্যগুলো দেখুক। আমি মনে করি না, সেই সময় আমি যা লিখেছিলাম, তা এখন আমার বর্তমানের প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি আরও জানান, বিতর্ক এড়াতে তিনি সম্প্রতি পোস্টগুলো সরিয়ে দিয়েছেন।
২০২১ সালের একটি ডিলিট করা রেডডিট মন্তব্যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রক্ষণশীল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্লাটনার লিখেছিলেন, “আমার বয়স বেড়েছে এবং আমি কমিউনিস্ট হয়েছি।” এই মন্তব্যটি তিনি r/Antiwork নামক একটি ফোরামে করেন, যেখানে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হতো।
আরেকটি পোস্টে, তিনি সামরিক জীবন থেকে ফিরে আসার পর নিজের জীবন সম্পর্কে মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি নিজেকে ‘একজন সবজি চাষি, মাদকাসক্ত এবং সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও যোগ করেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি দেশপ্রেমের ধারণায় বিশ্বাস করা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমি বিশ্বাস করি, একজন মানুষের সবচেয়ে ভালো কাজ হলো প্রতিবেশীদের সাহায্য করা এবং ভালোবাসাপূর্ণ জীবন কাটানো।”
সিনেট প্রার্থী বর্তমানে নিজেকে একজন ছোট ব্যবসায়ী এবং মেরিন কোরের সাবেক সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, “আমি কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রী নই।” তিনি রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্সের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন।
প্লাটনার কলিন্সকে ‘ভণ্ড’ আখ্যা দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন। প্লাটনারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছেন মেইনের জনপ্রিয় গভর্নর ৭৭ বছর বয়সী জ্যানেট মিলস।
নির্বাচনের দৌঁড়ে তিনি জয়ী হলে, তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক সিনেটর।
মেরিন ইনফ্যান্ট্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৪১ বছর বয়সী প্লাটনার, সেনা ন্যাশনাল গার্ড এবং একটি বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদার হিসেবেও কাজ করেছেন। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রায় ৪০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছেন। বার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তাকে সমর্থন করেছেন।
প্লাটনার তার রেডডিট অ্যাকাউন্টে নিজের নাম উল্লেখ না করলেও, তিনি তার সামরিক জীবন, বয়স, পেশা এবং মেইনে বসবাসের মতো কিছু ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেছিলেন। যদিও অ্যাকাউন্টটি ২০০৯ সাল থেকে খোলা ছিল, সিএনএন-এর পর্যালোচনায় তার বিতর্কিত মন্তব্যগুলো ২০২১ সালের দিকে বেশি করা হয়েছে।
পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর দেশব্যাপী প্রতিবাদের বিষয়েও তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেন। প্লাটনার আমেরিকান পুলিশের ক্ষমতা ও দুর্নীতির সমালোচনা করেন।
তিনি একবার লিখেছিলেন, “আমি সত্যি বলতে পারি যে, আমি ইন্টারনেটে একজন ‘অসভ্য’ ছিলাম।” তিনি আরও জানান, তার অনেক বন্ধু পুলিশ অফিসার রয়েছেন, এবং তারা সবাই খারাপ মানুষ নন।
২০২০ সালের একটি পোস্টে প্লাটনার লিখেছিলেন, শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা কতটা বর্ণবাদী এবং বোকা, সে সম্পর্কে তার নিজস্ব মতামত রয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন