মাথার চুল: মায়ের জিন থেকেই কি আসে টাক সমস্যা?

মাথায় চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে পুরুষদের মধ্যে উদ্বেগ বেশ পুরনো। বিশেষ করে যাদের বংশে টাক পড়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের মধ্যে এই দুশ্চিন্তা আরও বেশি দেখা যায়।

অনেকের ধারণা, টাক পড়ার পেছনে বুঝি মায়ের দিকটাই দায়ী। সত্যি বলতে কি, বিষয়টি এত সরল নয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষদের টাক পড়ার পেছনে মা ও বাবা উভয়ের কাছ থেকে আসা জিন এবং আরও কিছু বিষয় জড়িত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের শরীরে ডিএনএ বহনকারী ক্রোমোজোম থাকে, যার মাধ্যমেই আমাদের বৈশিষ্ট্যগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে যায়।

পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে, যা মায়ের কাছ থেকে আসে এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম বাবার থেকে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই এক্স ক্রোমোজোমের ‘অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর জিন’-এর সঙ্গে পুরুষদের টাক পড়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এই জিনের কারণে টাক পড়ার ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

কিন্তু শুধু মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জিনের ওপরই যে টাক পড়া নির্ভর করে, তা নয়।

শরীরে হরমোনের পরিবর্তনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, যখন ত্বক টেস্টোস্টেরনকে সক্রিয় টেস্টোস্টেরনে পরিণত করে, তখন এই প্রক্রিয়াটি ঘটে।

অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা টাক পড়ার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া, থাইরয়েডের সমস্যা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও চুল পড়তে পারে।

তাহলে, টাক পড়ার আসল কারণ কী?

এর উত্তর জানতে হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যেতে পারে, চুল পড়ার কারণ জিনগত নাকি হরমোনজনিত।

যদি কোনো রোগের কারণে এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

আর যদি জিনগত কারণে হয়েও থাকে, তবে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

জীবনযাত্রার কিছু বিষয়ও চুল পড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

যেমন— খাবার। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টির অভাব হলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।

খাদ্যতালিকায় জিংক, ভিটামিন ডি, আয়রন এবং বি ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত।

এই উপাদানগুলো চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সুতরাং, টাক পড়া একটি জটিল প্রক্রিয়া।

এর পেছনে যেমন জিনগত কারণ রয়েছে, তেমনই হরমোনের ভারসাম্য, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যও দায়ী।

তাই, চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করে এর প্রতিকার সম্ভব।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *