মালি: ভাষা শিক্ষার প্রকল্প বন্ধ, পিছিয়ে পড়ছে কয়েক হাজার তরুণ।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি ভাষা শিক্ষা প্রকল্পের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-র (USAID) তহবিল হ্রাস। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটির স্থানীয় ভাষায় প্রায় ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে লিখতে ও পড়তে শেখানো হতো।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে এই প্রকল্পের কার্যক্রম এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
আঠারো বছর বয়সী আমিনাতা দুম্বিয়া নামের এক তরুণী, যিনি এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছিলেন, তিনি বলেন, “আমি যখন এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম, তখন অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে।”
তিনি একজন বেকারি শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন এবং সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন।
দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা জর্জরিত মালিতে, এই প্রকল্পের সমাপ্তি হাজারো মানুষের জীবনে হতাশা নিয়ে এসেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মালির ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের অক্ষর জ্ঞান নেই।
দারিদ্র্য আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশটির অনেক মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
ইউএসএআইডি-র অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইউরোপের অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোও তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘শিফিন নি তাগনে’ নামে পরিচিত এই সাক্ষরতা প্রকল্পটি ছিল অনেকের কাছে শিক্ষার একমাত্র পথ। মালির ‘মালিয়ান এসোসিয়েশন ফর সার্ভাইভাল ইন দ্য সাহেল’ নামের একটি সংস্থার সাক্ষরতা তত্ত্বাবধায়ক মোদিবো সিসোকো জানান, সাক্ষরতা অর্জনের পর প্রশিক্ষণার্থীরা হেয়ারড্রেসিং, কাঠের কাজ, সেলাই, ওয়েল্ডিং এবং বেকিংয়ের মতো বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেতেন।
বামাকো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় ভাষা বিষয়ক অধ্যাপক ইসিয়াকা বালোর মতে, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারের ফলে দ্রুত জনগণের মধ্যে সাক্ষরতা বাড়ানো সম্ভব। তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমানে মালির মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ ফরাসি ভাষায় শিক্ষিত।
ইউএসএআইডি মালির প্রধান উন্নয়ন সহযোগী ছিল। তাদের সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু সাক্ষরতা কার্যক্রমই নয়, বয়স্ক শিক্ষা এবং সরকারি বিদ্যালয়ে সাক্ষরতা প্রকল্প সম্প্রসারণের মতো আরও অনেক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বামাকোর গাসু দবো স্কুলের প্রধান আমাদি বা জানান, ইউএসএআইডি-র অর্থায়নে তারা মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা চালু করতে পেরেছিলেন, যা এখন হুমকির মুখে।
তবে এই প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ওউমু ট্রাওরে নামের ২৯ বছর বয়সী এক নারী, যিনি সবজি চাষ করেন, তিনি জানান এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তার ব্যবসার হিসাব মাতৃভাষায় রাখতে শিখেছেন।
আগে যেখানে তিনি ৬০ ডলার আয় করতেন, এখন সেখানে ৯৫ ডলার আয় করেন।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাশিয়াকে মিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মালি। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য সেখানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হবে।
তবে ফতিমাতা তুরে নামের এক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের মতে, ইউএসএআইডি-র শূন্যস্থান পূরণ করা কঠিন হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস