মাল্টায় ঘোরার ৬টি আকর্ষণীয় উপায়: ২০২৩-এ অভিজ্ঞতা!

মাল্টা: এক মনোরম ইউরোপীয় গন্তব্য, যেখানে ইতিহাস আর প্রকৃতির মেলবন্ধন।

ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত মাল্টা, যা শুধু একটি দ্বীপপুঞ্জ নয়, বরং ইতিহাস আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র। এখানকার উজ্জ্বল রোদ, নীল সমুদ্র আর সুপ্রাচীন স্থাপত্য মাল্টাকে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে। যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য মাল্টা হতে পারে আদর্শ জায়গা।

ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর মাল্টা:

মাল্টার ইতিহাস ৭,০০০ বছরের পুরনো। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বিশ্বের প্রাচীনতম কিছু মানবনির্মিত স্থাপনা। এখানকার ‘গজ‍্যানটিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক’ (Ġgantija Archaeological Park) -এ রয়েছে ৫,৫০০ বছর আগের নিওলিথিক যুগের মন্দির। এছাড়াও ‘হাজার কুইম’ (Ħaġar Qim) -এর মেগালিথিক সাইট ও ‘হাল সাফলিয়েনি হাইপোজিয়াম’ (Ħal Saflieni Hypogeum)-এর মতো স্থানে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন.

আধুনিক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুরা মাল্টার রাজধানী ভ্যালেটায় (Valletta) যেতে পারেন। সেখানে ‘লাসকারিস ওয়ার রুমস’ (Lascaris War Rooms), ‘ফোর্ট সেন্ট এলমো’ (Fort St Elmo) এবং ‘মাল্টা অ্যাট ওয়ার মিউজিয়াম’-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নানা স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে।

প্রকৃতির রূপে মুগ্ধতা:

মাল্টার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যও পর্যটকদের মন জয় করে। বছরভর প্রায় ৩০০ দিন এখানে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকে, যা বহিরঙ্গন কার্যকলাপের জন্য উপযুক্ত। এখানকার পাহাড়ী পথ ধরে হেঁটে অথবা সাইকেল চালিয়ে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তারা ৭.৫ মাইল দীর্ঘ ‘ভিক্টোরিয়া লাইনস’ (Victoria Lines)-এ হাঁটতে পারেন। এছাড়া, ‘গোজো’ দ্বীপের ২৭ মাইলের উপকূলীয় পথে হেঁটে ‘ওয়েড ইল-ঘাসরি’ (Wied il-Għasri)-র গভীর গিরিখাত এবং ‘ওয়েড ইল-মিলাহ’ (Wied il-Mielaħ)-এর চুনাপাথরের স্থাপত্যও দেখা যেতে পারে।

ডুবুরিদের স্বর্গ:

যারা সমুদ্র ভালোবাসেন, তাদের জন্য মাল্টা এক অসাধারণ জায়গা। এখানকার স্বচ্ছ পানিতে ডুব দিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা নানা আকর্ষণ। বিশেষ করে ‘গোজো’ দ্বীপটি ডুবুরিদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।

এখানে ‘বিলিংহার্স্ট কেভ’ (Billinghurst Cave)-এর মতো গভীর গুহা, ‘ব্লু হোল’-এর (Blue Hole) মতো মনোমুগ্ধকর স্থান এবং ‘ইনল্যান্ড সি’-র (Inland Sea) দীর্ঘ টানেল আপনাকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া, কমিনোর ‘সান্তা মারিয়া কেভস’ (Santa Maria Caves)-এর আকর্ষণও কোনো অংশে কম নয়।

চলচ্চিত্রের জগৎ:

মাল্টা শুধু ইতিহাস আর প্রকৃতির জন্যই নয়, সিনেমার জগতেও পরিচিত। হলিউডের অনেক বিখ্যাত সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে। ‘পোপাই ভিলেজ’-এর (Popeye Village) মতো আকর্ষণীয় স্থানগুলো ছাড়াও, ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ (Gladiator) এবং ‘ট্রয়’ (Troy)-এর মতো সিনেমায় মাল্টার দৃশ্য দেখা যায়।

যারা সিনেমা ভালোবাসেন, তারা ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর (Game of Thrones) শুটিং হওয়া ‘মদিনা’ (Mdina)-র রাস্তায় হেঁটে আসতে পারেন, অথবা ‘ফোর্ট রিকাসোলি’-র (Fort Ricasoli) শক্তিশালী দুর্গগুলোতে যেতে পারেন।

মাল্টার খাবারের স্বাদ:

মাল্টার খাদ্যরীতি বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে গঠিত। এখানে আরবি, ভূমধ্যসাগরীয় এবং আফ্রিকান খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। মাল্টার জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ব্রাগিওলি’ (braġjoli), ‘বিগিলা’ (bigilla), ‘পাস্টিজি’ (pastizzi)।

এছাড়াও, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারেরও রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। মার্সাস্লোক (Marsaxlokk)-এর মতো উপকূলীয় গ্রামগুলোতে গেলে আপনি ক্রিস্পি ক্যালমারি এবং সুস্বাদু ‘লামুকি’ (lamuki) মাছের স্বাদ নিতে পারবেন।

উৎসবের মরসুম:

মাল্টায় সারা বছরই বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এপ্রিল মাসে এখানে ‘রান গোজো’ (Run Gozo) নামে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মে মাসে ‘তেআত্রু তাল-ওপ্রা অরোরা’-তে (Teatru tal-Opra Aurora) ‘নাবুকো’ (Nabucco) -এর মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।

গ্রীষ্মকালে এখানে ‘অ্যাবোড অন দ্য রক’ (Abode on the Rock) এবং ‘গ্লিচ’ (Glitch) -এর মতো ইলেক্ট্রনিক মিউজিক উৎসব হয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক আর্টস ফেস্টিভাল, কার্নিভাল, ফায়ারওয়ার্কস ফেস্টিভাল ও ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবের মতো নানা আয়োজন তো আছেই।

সুতরাং, মাল্টা ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। এখানকার ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুখরোচক খাবার এবং বিভিন্ন উৎসব একজন ভ্রমণকারীর মন জয় করতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *