যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জহরান মামদানির জয় ইসরায়েলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনপন্থি হিসেবে পরিচিত মামদানির এই বিজয়কে ইসরায়েলিরা তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
তাদের আশঙ্কা, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও শীতল হতে পারে। খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটার মামদানিকে সমর্থন করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিউ ইয়র্ক শহরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনগোষ্ঠীর বাস। তাই সেখানকার মেয়র নির্বাচনে এমন ব্যক্তির জয়, যিনি ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানান, তা ইসরায়েলিদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
অনেকের মতে, এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ ও ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই নির্বাচনকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন এবং নির্বাচিত মেয়রকে ‘ইসরায়েল-বিদ্বেষী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কর্মকর্তাদের এমন কঠোর প্রতিক্রিয়া মূলত রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশঙ্কা থেকেই এসেছে।
তাঁদের মতে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এখন রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
ঐতিহ্যগতভাবে, নিউ ইয়র্ক শহরের সঙ্গে ইসরায়েলের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছর বহু ইসরায়েলি পর্যটক ও রাজনীতিবিদ সেখানে যান।
এছাড়াও, নিউইয়র্কে একটি ইসরায়েলি কনস্যুলেট রয়েছে, যা সেখানকার ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে কাজ করে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই জয় আনন্দের সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনের রাজনীতিবিদ মুস্তাফা বারগুতি বলেছেন, “এই নির্বাচন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে এক বিশাল উত্থানকে প্রতিফলিত করে।”
তিনি আরও বলেন, “এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যু এখন বিশ্বজুড়ে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠেছে।
তবে, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জহরান মামদানি নিউ ইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি সবসময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আগের মতোই শক্তিশালী রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনও এই বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশেষ করে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নতুনভাবে মূল্যায়নের একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
এর পাশাপাশি, ফিলিস্তিন ইস্যু কিভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে, সেটিও নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস