১৯০৬ সালের সেই আর্থিক কেলেঙ্কারি: ম্যানচেস্টার সিটির গোপন ইতিহাস!

শিরোনাম: ফুটবল বিশ্বে আর্থিক কেলেঙ্কারি: ম্যানচেস্টার সিটি, সান্দারল্যান্ড এবং বর্তমানের বিতর্ক

ফুটবল, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাঠের লড়াইয়ের বাইরেও এর রয়েছে এক গভীর ইতিহাস, যেখানে অনেক সময়ই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি, ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অতীতেও, এমন ঘটনা ঘটেছে যখন ক্লাবগুলো আর্থিক কেলেঙ্কারির (financial scandal) কারণে বড় ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে।

আসুন, তেমন কিছু ঘটনার দিকে তাকানো যাক।

১৯০৬ সালে ম্যানচেস্টার সিটির ঘটনা:

প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় আগে, ১৯০৬ সালে ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের অবৈধভাবে অর্থ পরিশোধের অভিযোগ ওঠে। সেসময়, ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের বেতন এবং বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে বেশকিছু নিয়ম ভাঙা হয়েছিল।

সেই সময়ে খেলোয়াড়দের জন্য নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করা হতো, যা ছিল আইনের পরিপন্থী। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্লাবের পরিচালক এবং খেলোয়াড় বিলি মেরেডিথ।

তদন্তে প্রমাণ হয় যে, ক্লাবের কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ধরে রাখতে এই ধরনের অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, ক্লাবটিকে জরিমানা করা হয়, কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করা হয় এবং কয়েকজন পরিচালককে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর, ম্যানচেস্টার সিটি বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো পারফর্ম করতে পারেনি এবং একসময় তাদের দ্বিতীয় বিভাগে (relegation – অবনমন) নেমে যেতে হয়।

১৯৫৭ সালের সান্দারল্যান্ড কেলেঙ্কারি:

এরপর আসে ১৯৫৭ সালের সান্দারল্যান্ডের (Sunderland) ঘটনা। এখানেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তবে ঘটনার ধরন ছিল ভিন্ন।

“মি. স্মিথ” নামের এক ব্যক্তির চিঠি থেকে জানা যায়, ক্লাবটি খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করছে। তদন্তে জানা যায়, ক্লাবটি ঘাস কাটার খরচের (straw purchase) নামে অতিরিক্ত অর্থ দেখিয়ে, সেই টাকা খেলোয়াড়দের দিত।

এই কেলেঙ্কারির কারণে ক্লাবটির কয়েকজন পরিচালককে নিষিদ্ধ করা হয় এবং ম্যানেজার বিল মারে-কে জরিমানা করা হয়। খেলোয়াড়দের মধ্যেও কয়েকজনকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

এই ঘটনার ফলস্বরূপ, সান্দারল্যান্ড ক্লাবের খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙে যায় এবং তারা ধীরে ধীরে তাদের সেরা ফর্ম হারায়। এর কয়েক বছর পরই, ক্লাবটিকে দ্বিতীয় বিভাগে (relegation – অবনমন) নামিয়ে দেওয়া হয়।

ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান পরিস্থিতি:

বর্তমানে, ম্যানচেস্টার সিটি আবারও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লিগের (Premier League) বেশ কয়েকটি নিয়ম ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ক্লাবটিকে বড় ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, আর্থিক অনিয়মের কারণে একটি ক্লাবের ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

জরিমানা, খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করা, এমনকি লিগ থেকে অবনমন – এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে।

ফুটবলে আর্থিক স্বচ্ছতা (financial fair play) ও এর গুরুত্ব:

ফুটবলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। খেলোয়াড়দের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।

আর্থিক অনিয়ম খেলাটির সম্মানহানি করে এবং এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তাই, ফুটবল সংস্থাগুলোর উচিত এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

উপসংহার:

ফুটবলে আর্থিক অনিয়মের ইতিহাস নতুন নয়। ম্যানচেস্টার সিটি ও সান্দারল্যান্ডের ঘটনাগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

বর্তমান সময়ে, ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিষ্পত্তি হলে, ফুটবলে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে এবং খেলাটির মান আরও উন্নত হবে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *