নিউ ইয়র্কের পার্কে কাস্টমস অফিসারের উপর হামলা, দ্বিতীয় আসামি গ্রেপ্তার!

নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক মার্কিন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এই তথ্য জানান।

শনিবার ম্যানহাটনের একটি পার্কে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ছিলেন না এমন একজন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (CBP) কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ক্রিসথিয়ান আয়েবার-বেরোয়ারকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি ঘটনার সময় পালানোর জন্য ব্যবহৃত গাড়ির চালক ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আয়েবার-বেরোয়ারের সহযোগী মিগুয়েল মোরাকে রবিবার ব্রঙ্কসের একটি হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

মোরা কোমর ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ৪২ বছর বয়সী ওই শুল্ক কর্মকর্তা, যিনি পোশাকে ছিলেন না, জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজের কাছে একটি পার্কে এক নারীর সঙ্গে বসে ছিলেন। সে সময় দুই ব্যক্তি একটি মোটরসাইকেলে এসে তাদের কাছে আসে।

পুলিশের ধারণা, এটি একটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা ছিল। ঘটনার সময় ওই কর্মকর্তা নিজের অস্ত্র বের করলে হামলাকারীদের সঙ্গে তার গুলি বিনিময় হয়।

এতে ওই কর্মকর্তার মুখ ও হাতে গুলি লাগে, এবং হামলাকারীদেরও একজন আহত হয়। এরপর হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এক বিবৃতিতে জানান, আহত কর্মকর্তা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তার জীবন নিয়ে শঙ্কা নেই। তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের একজন কর্মী, যারা মূলত বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে কাজ করেন। আয়েবার-বেরোয়ার ও মোরার কোনো আইনজীবী পাওয়া যায়নি এবং ম্যানহাটনের ইউএস অ্যাটর্নি অফিসের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দুই সন্দেহভাজনই অবৈধভাবে ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার জানান, আয়েবার-বেরোয়ার ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসে এবং এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে চুরি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে আটটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলার তদন্ত চলছে।

স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আরও জানান, ২০২৩ সালে একজন ফেডারেল ইমিগ্রেশন বিচারক আয়েবার-বেরোয়ারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফেডারেল কর্মকর্তারা তাকে হেফাজতে নেওয়ার আগেই তারা তাকে মুক্তি দিয়েছিল।

নোয়েম আরও বলেন, ‘তাকে বারবার গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা কি আশা করেছিলাম?’ তিনি আরও জানান, মোরার বিরুদ্ধেও চুরি, মারধর ও অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মোরা ২০২৩ সালে অ্যারিজোনার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং নিউ ইয়র্কে তার বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও গুরুতর হামলার অভিযোগ রয়েছে এবং অস্ত্র চুরির একটি মামলায়ও তিনি অভিযুক্ত।

সিবিপির ম্যানহাটন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে নোয়েম বলেন, ‘পৃথিবীর এই ঘৃণ্য কীটদের নিউ ইয়র্ক সিটির রাস্তায় অবাধে ঘোরাঘুরি করার কোনো কারণ নেই।’

মেয়র এরিক অ্যাডামসও এক সংবাদ সম্মেলনে তথাকথিত ‘স্যানচুয়ারি সিটি’ নীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। এই নীতির কারণে অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা সীমিত থাকে।

নোয়েম এবং অন্যান্য ফেডারেল কর্মকর্তারা এই নীতির কারণেই ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন। মেয়র অ্যাডামস বলেন, ‘আমি তাদের রক্ষা করছি না। আমি সবসময় পরিষ্কারভাবে বলেছি: এই চক্রাকার ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।

আমরা বিপজ্জনক অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *