**ম্যানহাটন শুটিং: মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে থাকা ব্যক্তিদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার নতুন আইনের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক**
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি বন্দুক হামলার ঘটনা নতুন করে দেশটির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। গত ২৮শে জুলাই, একটি অফিস ভবনে চালানো এই হামলায় চারজন নিহত হন এবং একজন আহত হন।
হামলাকারী, ২৭ বছর বয়সী শেন ডেভন তামুরা, নিজেও পরে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনার পর, নেভাদা রাজ্যের একটি নতুন আইনের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা পুলিশকে দেয়।
নেভাদার নতুন আইনটি গত মাসেই কার্যকর হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যগত সংকটে থাকা কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার সময়, তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনটি সম্ভবত এমন পরিস্থিতিতে কাজে আসত, যেখানে তামুরার মতো কারো অস্ত্র থাকার কারণে সহিংসতার আশঙ্কা ছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তামুরার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দুটি সংকটকালীন পরিস্থিতিতে তার মা পুলিশের কাছে ছেলের আত্মহত্যার হুমকির কথা জানিয়েছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন, তা একটি বড় প্রশ্ন।
নেভাদার আইনে মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে কারো অস্ত্র রাখা বা কেনার ওপর সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না, যদি না আদালত থেকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হতো।
আগের আইনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকটের কারণে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, যতক্ষণ না আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দিত। তবে নতুন আইনটি এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
এই ধরনের আইনগুলো ‘রেড ফ্ল্যাগ ল’ নামে পরিচিত, যা মূলত সেইসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, যারা নিজেদের বা অন্যদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই ধরনের আইনগুলো বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে কার্যকর করা হয়।
কিছু রাজ্যে আদালতের অনুমোদনের পরেই অস্ত্র জব্দ করার নিয়ম রয়েছে, আবার কিছু রাজ্যে পুলিশের সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আইনগুলি তৈরি করা হয়েছে, যাতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার কারণে কেউ যদি নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার সম্ভবনা তৈরি করে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু এই আইনগুলোর প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অস্ত্র অধিকার সমর্থনকারীরা মনে করেন, কোনো অপরাধের প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের ব্যবস্থা তাদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করে।
তবে অনেক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এই আইনের সমর্থনে কথা বলেছেন। তাদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে ডিল করার সময় এই আইন তাদের সুরক্ষা দেবে এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে এরই মধ্যে ‘রেড ফ্ল্যাগ ল’-এর মতো আইন চালু হয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত রায় দেয়নি।
আদালত এখনো পর্যন্ত এই ধরনের আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এই ঘটনার পর, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়গুলো আরো একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে এবং বন্দুক সহিংসতা কমাতে এই ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
তথ্য সূত্র: CNN