**যুক্তরাজ্যের মঞ্চে ‘ম্যানহান্ট’: রাউল মোয়াটের জীবন ও অপরাধের অনুসন্ধান**
২০১০ সালে, যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো পুলিশি অভিযানের জন্ম দিয়েছিলেন রাউল মোয়াট। প্রাক্তন প্রেমিকার নতুন সঙ্গীকে খুন, প্রাক্তন প্রেমিকা ও একজন পুলিশ অফিসারকে গুরুতর আহত করে তিনি আত্মগোপন করেন। এরপর, তার জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, পরিচালক রবার্ট ইকের নতুন মঞ্চ নাটক ‘ম্যানহান্ট’-এ মোয়াটের জীবন ও অপরাধের তদন্ত তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটি মূলত আদালতের কাঠগড়ার আদলে সাজানো, যেখানে ঘটনার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
নাটকে রাউল মোয়াটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্যামুয়েল এডওয়ার্ড-কুক। ঘটনার ঘনঘটা দর্শকের সামনে তুলে ধরতে তিনি প্রায়ই দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। মঞ্চে সংক্ষিপ্ত দৃশ্যগুলোর মাধ্যমে মোয়াটের জীবনের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়।
আইনজীবীরাও তাদের যুক্তিতর্ক ও প্রশ্ন দিয়ে মোয়াটের বয়ানকে খতিয়ে দেখেন।
তবে, সমালোচকদের মতে, ইকের এই নির্মাণশৈলী কিছুটা ধীরগতির। নাটকের দৃশ্যগুলো ঘটনার ঘনঘটা তেমনভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।
নাটকটিতে রাউল মোয়াটের চরিত্রে অভিনয় করা স্যামুয়েল এডওয়ার্ড-কুকের শারীরিক উপস্থিতি বেশ আকর্ষণীয় হলেও, তার প্রাক্তন প্রেমিকা সামান্থা স্টোবার্ট এবং তার প্রেমিক ক্রিস ব্রাউন-এর চরিত্রগুলো যেন মোয়াটের ক্রোধের কারণ হিসেবেই বেশি ফুটে উঠেছে। মোয়াটের মা, এমনকি তার শৈশবের চরিত্রগুলোও নাটকে ভালোভাবে চিত্রিত হয়নি।
নাটকটি শুরুতে কিছুটা আকর্ষণ সৃষ্টি করলেও, ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এটি ব্যর্থ হয়েছে। মোয়াটের জীবনের বিভিন্ন দিক নাটকে তুলে ধরা হলেও, তার মানসিক অবস্থা এবং ভেতরের জগৎ সেভাবে উন্মোচিত হয়নি।
তিনি নিজেকে শিকারী, বিশালদেহী এবং সমাজের চোখে এক দানব হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো নাটকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না, বরং কিছুটা গতানুগতিক মনে হয়।
‘ম্যানহান্ট’ সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা, শ্রেণি বিভাজন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করে। বর্তমানে, যখন অনলাইনে পুরুষদের মধ্যে সহিংসতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, তখন এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।
যদিও এর আগে, এই ধরনের সমস্যা নিয়ে আরও কিছু কাজ হয়েছে, যেমন – স্টিফেন গ্রাহাম ও জ্যাক থর্নের নাটক ‘অ্যাডোলেসেন্স’। কিন্তু ‘ম্যানহান্ট’-এর নাট্যিক ক্ষমতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সেগুলোর মতো গভীরতা পায়নি।
নাটকের মঞ্চসজ্জা এবং দৃশ্যের পরিকল্পনা দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারলেও, ঘটনার গতি অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়েছে। সমালোচকদের মতে, সাধারণত ইকে ঘটনার গতি এবং সময়ের পরিবর্তন যেভাবে ফুটিয়ে তোলেন, এখানে সেই দক্ষতার অভাব দেখা যায়।
‘ম্যানহান্ট’ মূলত একটি অপরাধের ফল এবং পুরুষতান্ত্রিকতার সংকট নিয়ে নির্মিত। তবে, এটি দর্শকদের মনে গভীর কোনো প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।
যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তবে অনুগ্রহ করে দ্রুত সহায়তা নিন। আপনি এই নম্বরে ফোন করতে পারেন: [বাংলাদেশের একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইনের নম্বর] অথবা [অন্য কোনো সংস্থার নম্বর]। অথবা, আপনি আপনার পরিচিত কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian