শরীরচর্চা: সাফল্যের চাবিকাঠি মন্ত্র? কীভাবে কাজে লাগে?

ফিটনেস ধরে রাখতে অনুপ্রেরণা: মন্ত্রের জাদু

আজকাল, সুস্থ জীবনযাপনের গুরুত্ব বাড়ছে, এবং শরীরচর্চা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে।

কিন্তু অনেক সময় নিয়মিত ব্যায়াম করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন ব্যস্ততা বাড়ে।

এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে কিছু কৌশল, যার মধ্যে অন্যতম হলো মন্ত্র বা আত্ম-উচ্চারণ।

এগুলো আমাদের মনকে স্থির রাখতে এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকতে সহায়তা করে।

মন্ত্র আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মন্ত্র হলো এমন কিছু ছোট বাক্য বা শব্দগুচ্ছ যা আমরা নিজেদের মনে গেঁথে রাখি এবং যা আমাদের উৎসাহিত করে।

এগুলো আমাদের মানসিক শক্তি যোগায় এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।

যেমন, “আমি পারব” বা “আমার শরীর সুস্থ রাখতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।

এই ধরনের আত্ম-উচ্চারণের উপকারিতা অনেক।

যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা জানেন যে মানসিক জোর রাখাটা কতটা জরুরি।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাদের পছন্দের মন্ত্র শুনেছেন, তাদের মন আরও প্রফুল্ল ছিল এবং তারা কাজে মনোযোগ দিতে পেরেছেন।

খেলাধুলার ক্ষেত্রেও আত্ম-উচ্চারণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স উন্নত করতে সাহায্য করে।

ফিটনেস প্রশিক্ষকরাও তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সময় মন্ত্রের ব্যবহার করেন।

পেনসিলভেনিয়ার ইয়র্ক-এর ‘হোয়াট রানস ইউ’ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও নারী দৌড়বিদ কোচ অ্যালিশা ফ্লিন বলেন, “আমি মনে করি এগুলো খুবই উপযোগী।

এগুলো মানুষকে তাদের মনকে পুনরায় একত্রিত করতে এবং একটি টেকসই অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করে, যা তাদের দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে পারে।”

তবে, সবার জন্য একই মন্ত্র কাজ করে না।

প্রত্যেকের নিজের জন্য উপযুক্ত মন্ত্র খুঁজে বের করতে হয়।

একজন নারী প্রশিক্ষণ পরামর্শদাতা কায়া লুসিয়ানি বলেছেন, “আমি ক্লায়েন্টদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বাক্য বা উক্তি সুপারিশ করি না।

এগুলো সাধারণত স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত এমন কিছু হয় যা ক্লায়েন্টের সাথে মানানসই হয়।”

সাধারণত দেখা যায়, অল্পবয়সী মহিলারা এমন কিছু বাক্য ব্যবহার করেন যা তাদের আত্ম-অনুসন্ধানে সাহায্য করে, যেমন “আমি কঠিন জিনিসগুলো করতে পারি।”

অন্যদিকে, ৩৫ বা ৪৫ বছর বয়সী নারীদের মন্ত্রগুলো তাদের নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং তাদের শরীরের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।

পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য ব্যবহৃত মন্ত্রের মধ্যে তেমন কোনো বড় পার্থক্য দেখা যায় না।

বরং, এটি নির্ভর করে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাত্রার ধরনের উপর।

আপনার জন্য মন্ত্র খুঁজে বের করার কিছু উপায় আছে।

প্রথমে, এমন একটি বাক্য বেছে নিন যা সংক্ষিপ্ত এবং সহজে মনে রাখা যায়।

এটি আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষা থেকে আসতে পারে।

আপনি হয়তো এমন একটি শব্দগুচ্ছ পছন্দ করতে পারেন যা আপনাকে প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করে।

নতুন করে ব্যায়াম শুরু করার সময় তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে শুরু করা উচিত।

নিজেকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হলে তা হতাশাজনক হতে পারে।

ফিটনেস যাত্রায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুব জরুরি।

অভিজ্ঞ শরীরচর্চাকারীদের জন্য, নিজেদের একটু চ্যালেঞ্জ জানানো প্রয়োজন, যাতে তারা একঘেয়েমি অনুভব না করেন।

এছাড়াও, ছোটবেলা থেকে আপনার মনে গেঁথে থাকা ধারণাগুলো নিয়েও চিন্তা করা যেতে পারে।

আপনি যদি মনে করেন কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ব্যায়াম করতে আপনি অভ্যস্ত, তবে সেই ধারণা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।

সবসময় মনে রাখতে হবে, শরীরচর্চা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এখানে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

সুতরাং, মন্ত্র বা আত্ম-উচ্চারণ আমাদের শরীরচর্চাকে আরও আনন্দদায়ক এবং ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে।

এটি আমাদের মনকে শক্তিশালী করে এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকতে সাহায্য করে।

আপনিও আপনার জন্য উপযুক্ত মন্ত্র খুঁজে বের করুন এবং সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে যান।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *