শিরোনাম: মানুষের ক্রিয়াকলাপে বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র্য: বিশ্বজুড়ে অশনি সংকেত
পৃথিবীর বুকে মানুষের কার্যকলাপ কিভাবে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় সেই উদ্বেগের কথাই জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের অ্যাকুয়াটিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফেডারেল ইনস্টিটিউট (Eawag) এবং জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা এই গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র।
বিশ্বের প্রায় এক লক্ষ স্থান থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মানুষ জীববৈচিত্র্যের উপর এক অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছে।
গবেষণাটি অনুযায়ী, মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের কারণে স্থানীয় প্রজাতিগুলোর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বাস্তুতন্ত্রের গঠন পরিবর্তন হচ্ছে এবং সরীসৃপ, উভচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
মানুষের দ্বারা প্রভাবিত স্থানগুলোতে, মানুষের কোনো প্রভাব নেই এমন স্থানগুলোর তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রজাতি কম দেখা যায়।
গবেষকরা মূলত পাঁচটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন, যা জীববৈচিত্র্য হ্রাসের জন্য দায়ী। এগুলো হলো: আবাসস্থলের পরিবর্তন, সম্পদের সরাসরি শোষণ (যেমন শিকার বা মাছ ধরা), জলবায়ু পরিবর্তন, আগ্রাসী প্রজাতি এবং দূষণ।
গবেষণায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষিকাজের কারণে সৃষ্ট দূষণ ও আবাসস্থলের পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
কীটনাশক ও সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেক সময় জমির উর্বরতা কমে যায়, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনো পুরোপুরি বোঝা না গেলেও, এর নেতিবাচক প্রভাব যে সুদূরপ্রসারী, তা বলাই বাহুল্য।
এই গবেষণা শুধুমাত্র প্রজাতি হ্রাসের সংখ্যাকে তুলে ধরেনি, বরং প্রজাতি সম্প্রদায়ের গঠনে মানুষের হস্তক্ষেপের চিত্রও স্পষ্ট করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ, যা উচ্চতায় জন্মায়, তারা ধীরে ধীরে তাদের স্থান হারাচ্ছে, কারণ সেখানে অন্য প্রজাতির গাছ জন্মানো হচ্ছে।
গবেষকরা একে ‘বিলুপ্তির দিকে ওঠা লিফট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর কারণ হলো, উচ্চ অঞ্চলের উদ্ভিদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
গবেষণাটির প্রধান লেখক ফ্রাঁসোয়া কেক বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, পাঁচটি কারণই বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্যের উপর তীব্র প্রভাব ফেলছে, যা সকল জীবগোষ্ঠী এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণাপত্রটি ভবিষ্যতে পরিবেশ সংরক্ষণের কৌশল তৈরি ও মূল্যায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
তারা আরও মনে করেন, মানুষের তৈরি করা কঠিন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম প্রজাতিগুলোর সংখ্যা ও তাদের জিনগত বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখাটা জরুরি।
এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের নদ-নদীগুলোতে ক্রমাগত দূষণ, সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বনভূমি ধ্বংসের মতো বিষয়গুলো জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
তাই, এখনই সময় পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি সচেতন হওয়া এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান