বদলে যাচ্ছে পৃথিবী! ভয়াবহ ছবিগুলো দেখলে শিউরে উঠবেন

শিরোনাম: মানুষের কীর্তি: শিল্পী এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির ক্যামেরায় পৃথিবীর পরিবর্তন

কানাডার খ্যাতিমান আলোকচিত্রী এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি-র ছবিগুলো যেন মানুষের তৈরি করা এক একটি প্রতিচ্ছবি, যেখানে প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব সুস্পষ্ট। শিল্পের এই ধারায় তিনি গত কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের কার্যকলাপের ভয়াবহ চিত্র ক্যামেরাবন্দী করেছেন।

সম্প্রতি, নিউ ইয়র্কের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ ফটোগ্রাফি (আইসিপি)-তে তার কাজের একটি বড় প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যার শিরোনাম ‘দি গ্রেট অ্যাক্সিলারেশন’ (The Great Acceleration), যা মূলত মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করে।

বার্টিনস্কি’র ছবিগুলোতে খনি, কারখানা, এবং শিল্প-কারখানার দৃশ্যগুলো প্রধান্য পায়। তাঁর ছবিতে প্রকৃতির এক অন্যরকম রূপ ফুটে ওঠে, যা দর্শকদের বিস্মিত করে তোলে।

ছবিগুলোতে একদিকে যেমন মানুষের তৈরি করা স্থাপত্যের বিশালতা দেখা যায়, তেমনই পরিবেশের উপর এর প্রভাবও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের উপকূলের জাহাজ ভাঙা শিল্প-কে তিনি ক্যামেরাবন্দী করেছেন, যা একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে, তেমনই পরিবেশের জন্য এক বিশাল হুমকি।

বার্টিনস্কি’র কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে, যখন তিনি টরেন্টোর একটি আর্ট কলেজে প্রথম ফটোগ্রাফি ক্লাসে অংশ নেন। তাঁর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল এমন একটি বিষয় নির্বাচন করা যা ‘মানুষের প্রমাণ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এরপর তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন, যেমন—পেনসিলভানিয়ার কয়লা খনি, ইতালির মার্বেল পাথরের খাদ, চীনের বিশাল কারখানা। তাঁর তোলা ছবিগুলো বিশাল আকারে উপস্থাপন করা হয়, যা দর্শকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।

বার্তিনস্কি মনে করেন, প্রযুক্তি ও মানুষের বিস্তার—এই দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে জড়িত। তাঁর ছবির মূল উদ্দেশ্য হলো এই পরিবর্তনগুলো ক্যামেরাবন্দী করা। তিনি বলেন, মানুষের কার্যকলাপের ফলে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তা এক ধরনের ‘প্রযুক্তিগত মহিমা’ তৈরি করেছে।

এই প্রদর্শনীতে বার্টিনস্কির তোলা কিছু নতুন ছবিও রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কঙ্গোর একটি খনির ছবি। যেখানে খনিজ পদার্থ সংগ্রহের পর অবশিষ্ট পাথরগুলো স্তূপাকারে ফেলা হয়।

এই পাথরের স্তূপে কোবাল্ট পাওয়া যায়, যা মোবাইল ফোন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। বার্টিনস্কি’র মতে, এই ছবিগুলো আমাদের কাছে অপরিচিত একটি জগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, যেখানে আমরা প্রতিদিনের জীবনে অংশ নিই।

বার্টিনস্কি’র ছবিতে মানুষের উপস্থিতি কম দেখা যায়, কারণ তিনি মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস এবং এর প্রভাবকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, প্রকৃতিতে মানুষের তৈরি করা এই পরিবর্তনগুলোই এখন ‘মহিমান্বিত’।

এটি যেন প্রকৃতির এক নতুন রূপ, যেখানে মানুষ তার নিজের সৃষ্টি দ্বারা নিজেই প্রভাবিত হচ্ছে।

বার্টিনস্কি’র কাজ আমাদের বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি। তাঁর ছবিগুলো শুধু সুন্দরই নয়, বরং মানবসৃষ্ট পরিবর্তনের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

তিনি প্রায়শই বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা একটি জটিল সময়ে বাস করছি এবং এই সময়ের সাক্ষী হওয়াটাই তাঁর কাজ। তাঁর ছবিগুলো আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়: আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারবো?

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *