বাংলার নদ-নদী রক্ষার এক নতুন দিগন্ত: পেরুর একটি নদীর ‘আইনগত সত্তা’র স্বীকৃতি।
প্রকৃতিকে রক্ষার লড়াইয়ে এবার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। দূষণ আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পেরুর একটি নদীর অধিকার রক্ষার লড়াই আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দেশটির একটি আদালত সম্প্রতি ম্যারানন নদীকে ‘আইনগত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পেরুর আন্দিজ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে আমাজন নদীতে মিলিত হওয়া ম্যারানন নদীটি প্রায় ১,৪৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এই নদীর দু’পাশে বসবাসকারী কুকামা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা নদীর উপর নির্ভরশীল।
কিন্তু কয়েক দশক ধরে অপরিকল্পিতভাবে তেল নিষ্কাশনের ফলে এই নদীর জল মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ে। এর ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে শুরু করে, যা স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
নদীর এই দূষণ এবং স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মারি লুস ক্যানাকুইরি মুরায়ারি নামের এক নারী। তিনি কুকামা সম্প্রদায়ের মানুষ এবং এই নদীর তীরেই তার বেড়ে ওঠা।
তিনি ‘আসোসিয়েশন দে মুজেরেস হুয়ানাকানা কামাতাহুয়ারা কানা’ (HKK) বা ‘কঠিন পরিশ্রমী নারীদের সংগঠন’ প্রতিষ্ঠা করেন। গত দুই দশক ধরে এই সংগঠনটি নদীর অধিকার রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সংগঠনটির নিরলস প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, অবশেষে আদালত ম্যারানন নদীকে ‘আইনগত সত্তা’র স্বীকৃতি দিয়েছে। এর অর্থ হলো, এখন থেকে নদীটির নিজস্ব কিছু অধিকার থাকবে এবং তাকে দূষণমুক্ত ও স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে দিতে হবে।
এই রায়ের ফলে, স্থানীয় কুকামা সম্প্রদায়ের মানুষজন এখন নদীর পক্ষ থেকে এর সুরক্ষার জন্য কাজ করতে পারবে। তেল কোম্পানি পেট্রো-পেরু সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তেল দূষণ বন্ধ করতে এবং নদী ও এর উপনদীগুলোর সুরক্ষার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিষয়টি শুধু পেরুর জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের পরিবেশবাদীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। ক্যানাকুইরি মুরায়ারি বলেন, এই রায় অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ এবং অন্যান্য নদীর অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তিনি আরও মনে করেন, তাদের এই লড়াই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তবে আমাদের নদ-নদীর দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাসহ বিভিন্ন নদ-নদী আজ দূষণের শিকার।
কলকারখানার বর্জ্য, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিভিন্ন ধরনের দূষণের কারণে নদীর বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, পেরুর এই ঘটনা বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা মানুষদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন