পুরুষ এবং মহিলাদের ম্যারাথনে এখন সৌন্দর্যচর্চা!
খেলাধুলার জগতে, বিশেষ করে ম্যারাথন দৌড়বিদদের মধ্যে, সৌন্দর্যচর্চার একটি নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে যেখানে ক্রীড়াবিদদের প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের পারফরম্যান্স উন্নত করা, সেখানে এখন তারা তাদের সাজসজ্জা এবং ব্যক্তিগত যত্নের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন।
লন্ডনের একজন দৌড়বিদ ক্লোই হিউমফ্রিস-এর কথাই ধরুন। দৌড়ের আগে তিনি ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করেন, যা তার ৬ লক্ষাধিক Instagram ফলোয়ারের সাথে ভাগ করে নেন।
তিনি মনে করেন, দৌড়ের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল নিজের যত্ন নেওয়া। মেকআপ করা তার কাছে একটি বিশেষ মুহূর্ত, যা তাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং দৌড়ের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।
শুধু হিউমফ্রিসই নন, এই দলে আছেন আরও অনেকে। ইন্টিসার আব্দুল-কাদিরের মতো দৌড়বিদরা প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের ত্বক এবং মেকআপের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন। তারা চান, দৌড়ের সময় তাদের দেখতে ভালো লাগুক এবং আত্মবিশ্বাসী মনে হোক।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আগে, পুরুষতান্ত্রিক ক্রীড়া সংস্কৃতিতে নারীদের সৌন্দর্যচর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো না।
কিন্তু এখন, ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার প্রবণতা বাড়ছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক।
এই প্রসঙ্গে, ১৯৮০-এর দশকের খ্যাতিমান দৌড়বিদ ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ-জয়নারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তার অসাধারণ দৌড়ানোর ক্ষমতার পাশাপাশি লম্বা, উজ্জ্বল রঙের নখের জন্য পরিচিত ছিলেন।
যদিও অনেকে তার এই সাজসজ্জাকে ভিন্ন চোখে দেখতেন, তবে এটি তাকে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছিল।
বর্তমান সময়ে, অনেক দৌড়বিদ তাদের সৌন্দর্যচর্চাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তারা এখন ফেক ট্যান, নেইল আর্ট এবং চুলের স্টাইলিংয়ের মতো অত্যাধুনিক সৌন্দর্যচর্চা করেন।
এমনকি, কিছু ব্র্যান্ড এখন দৌড়বিদদের সাথে অংশীদারিত্ব করছে এবং তাদের পণ্য ও পরিষেবার প্রচার করছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যারাথনে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দৌড়বিদদের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রবণতা বাড়ছে।
TikTok-এর মতো প্ল্যাটফর্মে “কীভাবে দৌড়ানোর সময় সুন্দর দেখাবেন” বা “ম্যারাথনের জন্য মেকআপ” এর মতো ভিডিওগুলির জনপ্রিয়তা এর প্রমাণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে খেলাধুলায় নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। এখন, নারীরা তাদের শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি নিজেদের সৌন্দর্য এবং শৈলী নিয়েও গর্বিত।
তারা প্রমাণ করছেন যে, তারা একইসঙ্গে শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় হতে পারে।
এই নতুন প্রবণতা প্রমাণ করে, ম্যারাথন এখন শুধু একটি দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, এটি আত্মপ্রকাশের একটি মঞ্চও বটে।
তথ্য সূত্র: CNN