দৌড়ের মঞ্চে রূপচর্চা: ম্যারাথন এখন সৌন্দর্যের ক্যাটওয়াক?

দৌড় প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্যচর্চা: খেলার ময়দানে নতুন এক প্রবণতা

খেলাধুলার জগতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার সাথে সাথে তাদের সাজসজ্জা এবং সৌন্দর্যচর্চায়ও এসেছে পরিবর্তন। সম্প্রতি, দৌড় প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে ম্যারাথনে, প্রতিযোগীদের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতা বাড়ছে। তারা এখন দৌড়ের আগে ও পরে ত্বকচর্চা, মেকআপ এবং অন্যান্য বিউটি ট্রিটমেন্টের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক নারী দৌড়বিদ এখন শুধু ভালো পারফর্ম করার দিকেই মনোযোগ দেন না, বরং নিজেদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার দিকেও নজর দিচ্ছেন। তারা মনে করেন, দৌড়ের সময় আত্মবিশ্বাসী থাকতে এবং ভালো অনুভব করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণস্বরূপ, ক্লোয়ি হামফ্রিস নামের একজন নারী দৌড়বিদ তার স্কিন কেয়ার রুটিনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দৌড়ের আগে ত্বকচর্চা করাটা তার কাছে ওয়ার্ম-আপের মতো। তিনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করেন এবং তার এই সৌন্দর্যচর্চার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন, যা তার ৬ লক্ষাধিক ফলোয়ারের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এছাড়াও, ইনতিসার আবদুল-কাদির এবং শার্লট পার্ডিউর মতো দৌড়বিদরাও তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তারা জানান, প্রতিযোগিতায় সুন্দরভাবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা তাদের কাছে গর্বের বিষয়। দৌড়বিদ শার্লট পার্ডিউ বলেন, “এটা অনেকটা অফিসের মতো। আপনি যেমন ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে অফিসে যান, তেমনি প্রতিযোগিতায়ও ভালো দেখতে লাগাটা গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু ত্বকচর্চাই নয়, অনেকে এখন ট্যানিং, ম্যানিকিউর এবং চুলের স্টাইলিংয়ের মতো আরও বিস্তারিত সৌন্দর্যচর্চা করেন। স্প্রিন্টার শাকা’রি রিচার্ডসন এর উদাহরণ দেওয়া যায়। তিনি তার নখ ডিজাইন এর জন্য পরিচিত, যা তার ব্যক্তিগত স্টাইলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলায় নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। আগে, খেলোয়াড়, বিশেষ করে নারীদের, সৌন্দর্যচর্চার দিকে মনোযোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হতো। কারণ, খেলাধুলায় সৌন্দর্যকে পারফরম্যান্সের পথে বাধা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু এখন, নারীরা তাদের সৌন্দর্য এবং খেলাধুলা – দুটো দিকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্পোর্টস বিজনেসের অধ্যাপক আন্দ্রেয়া গেরিন বলেন, “পুরুষতান্ত্রিক ক্রীড়া সংস্কৃতিতে নারীদের খেলাধুলাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হতো না। তাই, নারী ক্রীড়াবিদরা তাদের সৌন্দর্য অথবা নারীত্বের দিকগুলো প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করতেন। কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। নারীরা এখন তাদের ইমেজ এবং পরিচয়ের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিচ্ছেন।

এই পরিবর্তনের একটি বড় উদাহরণ হলেন ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ-জয়নার (ফ্লো জো)। ১৯৮০-এর দশকে তিনি শুধু তার দৌড়ের জন্য নয়, বরং লম্বা নখ এবং উজ্জ্বল পোশাকের জন্যেও পরিচিত ছিলেন।

বর্তমানে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে নারী দৌড়বিদদের দৃশ্যমানতা বেড়েছে। টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে “দৌড়ানোর সময় কীভাবে সুন্দর দেখাবেন” বা “ম্যারাথনের জন্য মেকআপ” – এই ধরনের ভিডিওর সংখ্যাও বাড়ছে।

এই প্রবণতা ব্র্যান্ডগুলোর কাছেও নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি, কসমেটিকস কোম্পানি মেবেলিন নিউ ইয়র্ক নিউ ইয়র্ক সিটি ম্যারাথনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিবর্তন নারীদের খেলাধুলায় আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। তারা এখন তাদের সৌন্দর্য এবং ক্রীড়াশৈলী – দুটো দিকেই সমানভাবে মনোযোগ দিতে পারছেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *