যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩০-এর দশকের নাচের ম্যারাথন, যা শিল্পী নিকোল ওয়ারমারের নতুন শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা।
নিকোল ওয়ারমারের নতুন শিল্পকর্ম ‘ম্যারাথন ডান্স রিলিফ’ বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের লিসমোরের সেন্ট কার্থেজ হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই শিল্পকর্মটি ১৯৩০-এর দশকে আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সময়কার নাচের ম্যারাথন প্রতিযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সেসময়, বিজয়ী হওয়ার আশায় প্রতিযোগীরা দিনের পর দিন ধরে অবিরাম নেচে যেত, যেখানে টিকে থাকার পুরস্কার ছিল এক বছরের বেতনের সমান অর্থ।
সে সময়ে মানুষ কঠিন জীবনযাপন করত। রুটি-রুজির অভাব ছিল ব্যাপক। তাই সামান্য কিছু অর্থের লোভেও মানুষ এমন সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রাজি হত।
নাচের ম্যারাথন ছিল তেমনই এক ধরনের বিনোদন, যেখানে প্রতিযোগীরা একটানা নেচে যেত। যারা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নাচতে পারত, তারাই পেত পুরস্কার।
ওয়ারমারের এই শিল্পকর্মটি তৈরি হয়েছে ১০টি ধূসর আয়তক্ষেত্রাকার ফলক দিয়ে, যেখানে বাতাস-শুকনো মাটি দিয়ে গড়া নাচেরতৎপর যুগলদের উপস্থাপন করা হয়েছে। এদের বসানো হয়েছে ছোট টেবিলের ওপর, যা অনেকটা ভাস্কর্যীয় চিত্রের মতো।
শিল্পী এখানে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মানুষের শরীরের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
ওয়ারমারের কাজের মূল বিষয়বস্তু হল সমাজের দুর্বল মানুষগুলোর টিকে থাকার লড়াই। তার এই কাজটি শুধু অতীতের একটি ঘটনার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং আজকের দিনের রিয়েলিটি টিভি শো-এর একটি আদি সংস্করণও বটে।
যেখানে মানুষজন অর্থ অথবা খ্যাতির জন্য নিজেদের উজাড় করে দেয়।
এই শিল্পকর্ম দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। যেখানে একদিকে যেমন রয়েছে নাচের ক্লান্তি, তেমনই অন্য দিকে রয়েছে টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছা।
ওয়ারমারের মতে, এটি “ব্যর্থতার নৃত্য”। যুগলবন্দীর এই নাচের মধ্যে তিনি আসলে সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
যুদ্ধ, মহামারী কিংবা অর্থনৈতিক সংকট—এমন পরিস্থিতিতে মানুষ টিকে থাকার জন্য অনেক কিছুই করতে প্রস্তুত থাকে।
ওয়ারমারের কাজটি যেন সেই কঠিন বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি।
শিল্পকর্মটি আগামী ২৫শে মে পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান