যুদ্ধকালের ফ্রান্সের গোপন কথা: মার্শেল ওফুলসের সাহসী অভিযান!

বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্সেল অফুলস আর নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের নাৎসিদের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে তাঁর সাহসী চলচ্চিত্রগুলো তাঁকে এনে দিয়েছে খ্যাতি। তাঁর প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মার্সেল অফুলস ছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ম্যাক্স অফুলসের পুত্র। জার্মানে জন্ম নেওয়া অফুলস, হিটলারের ক্ষমতা লাভের পর ফ্রান্সে পালিয়ে যান। পরে নাৎসি বাহিনীর আক্রমণের মুখে তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন।

যুদ্ধ শেষে তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে আসেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধানী চলচ্চিত্র তৈরিতে সহায়তা করে।

তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো ১৯৬৯ সালের চলচ্চিত্র ‘দ্য সরো অ্যান্ড দ্য পিটি’। সাড়ে চার ঘণ্টার এই চলচ্চিত্রে যুদ্ধের সময় ফরাসি সমাজের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবিতে ফ্রান্সের মানুষের নাৎসিদের প্রতি সহযোগিতা এবং প্রতিরোধের দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স নিজেদেরকে কেবল নির্যাতিত হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। অফুলসের চলচ্চিত্রটি সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ছবিতে দেখানো হয়, কীভাবে অনেকে ভিনদেশি বিদ্বেষী ছিল এবং প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে খবর দিত। এমনকি সমাজে ইহুদিবিদ্বেষও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।

‘দ্য সরো অ্যান্ড দ্য পিটি’ চলচ্চিত্রটি তৈরি করতে ফরাসি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ প্রথমে রাজি হয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে এটি অস্কারের জন্য মনোনীত হয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। ছবিতে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি ইডেনের একটি সাক্ষাৎকার ছিল, যেখানে তিনি ফরাসিদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বলেছিলেন।

অফুলস তাঁর চলচ্চিত্রে এইসব বিষয়গুলো খুবই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন।

পরবর্তীতে, অফুলস ‘হোটেল টার্মিনাস: দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ ক্লস বার্বি’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যা তাঁকে এনে দেয় অস্কার পুরস্কার। এই ছবিতে লিয়ঁর গেস্টাপো প্রধানের জীবন তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের সমস্যা, বসনিয়ার যুদ্ধ এবং পূর্ব জার্মানি নিয়েও কাজ করেছেন।

ইসরায়েল-ফ্যালেস্টাইন সম্পর্ক নিয়ে তাঁর একটি অসমাপ্ত কাজও ছিল।

মার্সেল অফুলসের চলচ্চিত্রগুলো যুদ্ধের সময়ে মানুষের মানসিকতা এবং সমাজের ভেতরের জটিলতাগুলো তুলে ধরে। তাঁর কাজের মাধ্যমে, তিনি ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শিখিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *