বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্সেল ওফালস, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের অতীতকে নতুন করে মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন, ৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। শনিবার ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর নাতি আন্দ্রেয়াস-বেঞ্জামিন সেইফার্ট এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
ওফালস, যিনি অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র “হোটেল টার্মিনাস” (১৯৮৮)-এর জন্য পরিচিত, মূলত তাঁর ১৯৬৯ সালের তথ্যচিত্র “দ্য সরো অ্যান্ড দ্য পিটি”-এর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এই চলচ্চিত্রে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি জনগণের নাৎসিদের প্রতি সহযোগিতা এবং প্রতিরোধের বিষয়ে প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেন।
জার্মানিতে জন্ম নেওয়া ওফালসের পরিবার ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতা দখলের পর ফ্রান্সে পালিয়ে আসে।
তাঁর বাবা ছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ম্যাক্স ওফালস।
১৯৪০ সালে নাৎসি বাহিনী প্যারিসের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরে, তাঁরা স্পেন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
“দ্য সরো অ্যান্ড দ্য পিটি” চলচ্চিত্রটি তৈরি হওয়ার আগে, ফ্রান্সের মানুষজন নিজেদের প্রতিরোধের বিষয়ে একটি ভিন্ন ধারণা পোষণ করত।
তারা মনে করত, ফরাসিরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে নাৎসিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু ওফালসের চলচ্চিত্রটি দেখায়, যুদ্ধের সময় অনেক ফরাসি নাগরিক ভয়ের কারণে, নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য, এমনকি সুযোগ সন্ধানের কারণেও জার্মানদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল।
এই চলচ্চিত্রে ফরাসি পুলিশের ইহুদিদের বিতাড়নে সাহায্য করা, প্রতিবেশীদের নীরবতা, শিক্ষকদের সহকর্মীদের কথা অস্বীকার করা—এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল।
এই চলচ্চিত্রটি এতটাই বিতর্কিত ছিল যে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি ফরাসি টেলিভিশনে নিষিদ্ধ ছিল।
তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে, যারা যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসছিল, এই চলচ্চিত্রটি ছিল এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী।
এটি ছিল ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি, যা জাতীয় স্মৃতি এবং পরিচিতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
“দ্য সরো অ্যান্ড দ্য পিটি” চলচ্চিত্রটি ১৯৭২ সালে সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
পরবর্তীতে ওফালস “দ্য মেমরি অফ জাস্টিস” (১৯৭৬) এবং “হোটেল টার্মিনাস” (১৯৮৮)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং নৈতিকতার জটিলতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
ওফালস প্রায়ই নিজেকে বহিরাগত মনে করতেন।
তিনি একবার বলেছিলেন, “অধিকাংশ মানুষ এখনও আমাকে একজন জার্মান ইহুদি হিসেবে দেখে, যে ফ্রান্সকে নিয়ে সমালোচনা করতে চায়।”
মার্সেল ওফালস তাঁর স্ত্রী রেজিন, তিন কন্যা এবং তিন নাতি-নাতনিকে রেখে গেছেন।
তাঁর কাজ চলচ্চিত্র জগতে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যা সত্যকে তুলে ধরার সাহস জুগিয়েছে এবং ইতিহাসের নতুন পাঠ দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস