মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের আভাস, রুবিও’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে মার্কো রুবিও’র কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রুবিও’র চেয়ে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, স্থপতি এবং বিলিয়নেয়ার স্টিভ উইটকফ’র প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রনীতিতে রুবিও’র ভূমিকা ক্রমশ কমে আসছে কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প প্রায়ই বিতর্কিত সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পররাষ্ট্রনীতিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রুবিও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই ট্রাম্পের রোষানলে পড়ার সম্ভবনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এমনকি তিনি এটাও জানতেন যে, ট্রাম্প যেকোনো সময় টুইট করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে পারেন।
কিন্তু এতোকিছুর পরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকের গুরুত্বপূর্ণ পদটির জন্য চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু অনেকের মতে, রুবিও সম্ভবত এমনটা আশা করেননি যে, পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তার চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ। উইটকফ-এর পদটি আনুষ্ঠানিক না হলেও, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে উইটকফ-কে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। ইসরায়েলের জিম্মিদের মুক্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়ায় আটক মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোতে উইটকফের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এমনকি, গত সপ্তাহে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে একজন মন্তব্য করেছেন, “উইটকফ যেন পুরো বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতোই কাজ করছেন। তার একটি বিশেষ সুবিধা আছে, যা আর কারও নেই—সেটি হলো ট্রাম্পের শতভাগ আস্থা।”
অন্যদিকে, রুবিও তার দায়িত্ব পালনে বেশ সক্রিয় রয়েছেন। তিনি মধ্য আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং কানাডায় বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। অভিবাসন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন জি-৭ অংশীদারদের সঙ্গে।
তবে, প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপে রুবিও’কে অস্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। জানা যায়, ট্রাম্প মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তিনি এলন মাস্কের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এমনকি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের আলোচনায় তাকে “বিমর্ষ” অবস্থায় দেখা গেছে।
এসব কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রুবিও’র প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও রুবিও ছিলেন মন্ত্রিসভার প্রথম সদস্য, যিনি সর্বসম্মতিক্রমে এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তার ভূমিকা আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণের মতো প্রভাবশালী ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনেটর জানিয়েছেন, “আমার মনে হয় তিনি হতাশ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পররাষ্ট্রনীতিতে রুবিও’র চেয়ে উইটকফের প্রভাব বেশি থাকার কারণে, রুবিও’র কর্মজীবনে এর প্রভাব পড়তে পারে।
তবে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রুবিও’র প্রভাব কমানোর যে ধারণা করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ এক বিবৃতিতে জানান, “পররাষ্ট্র সচিব রুবিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমা গোলার্ধের নীতি নির্ধারণে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।”
অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, “এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সচিব রুবিও এবং বিশেষ দূত উইটকফের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা একসঙ্গে প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।”
রুবিও’র ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি সম্ভবত ১৮ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন