গানের জগতে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন ম্যারি পিয়ের, পুরনো ‘ভালোবাসার’ গল্প!

ব্রিটিশ ‘লাভস রক’ সংগীতের কিংবদন্তি মারি পিয়েরের জীবন: এক বেদনাময় যাত্রা

সংগীত জগতে এমন কিছু শিল্পী আছেন, যাঁদের প্রতিভা আকাশ ছুঁলেও, নানা কারণে তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হন। মারি পিয়ের তেমনই একজন। সত্তরের দশকের শেষের দিকে ‘লাভস রক’ ঘরানার সংগীতে নিজের কণ্ঠের জাদু দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন তিনি।

‘ওয়াক অ্যাওয়ে’র মতো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গান উপহার দেওয়া এই শিল্পী, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে আবার ফিরছেন সংগীতাঙ্গনে।

**সংগীতের ভুবনে আগমন**

মারি পিয়ের, যাঁর আসল নাম মেরিলিন, দক্ষিণ লন্ডনের ক্ল্যাপহামে বেড়ে ওঠেন। তাঁর বাবা ছিলেন গায়ানার একজন পরিচিত সঙ্গীতশিল্পী।

১৯৭৮ সালে, মারি যখন তাঁর ক্যারিয়ারের শীর্ষে, তখন ‘ওয়াক অ্যাওয়ে’ গানটি ইউকে রেগে চার্টে এক নম্বরে ছিল। তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘লাভ অ্যাফেয়ার’ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো তাঁর সমসাময়িক শিল্পী জ্যানেট কায়ের মতোই মূলধারার পপ-রেগেতে সফল হবেন। কিন্তু নিয়তির পরিহাস!

মারি পিয়েরের সংগীতজীবন, যা এত উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, তা যেন এক দীর্ঘশ্বাস। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে।

হতাশা, অবিশ্বাস আর বঞ্চনার শিকার হয়েছেন তিনি। মারি একবার বলেছিলেন, “আমার মনে হয় যেন আমি শিকলে বাঁধা পড়েছিলাম, কোনো কারণ ছাড়াই।”

**সংগীতের শিক্ষক ডেনিস বোভেলের হাত ধরে**

মারি পিয়েরের সংগীত জীবনের শুরুতে, তাঁর শিক্ষক এবং পরামর্শদাতা ছিলেন ডেনিস বোভেল। ডেনিস বোভেল তাঁকে গানের জগৎ চিনিয়েছেন, গানের সুর তৈরি করতে শিখিয়েছেন।

মারি বোভেলের সম্পর্কে বলেছিলেন, “তিনি ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের মতো।” বোভেলের উৎসাহেই মারি তাঁর প্রথম গান ‘ক্রাই’ রেকর্ড করেন, যা ‘এঞ্জেলিক’ নামে প্রকাশিত হয়।

মারি পিয়েরের কথায়, “ডেনিস আমাকে সবসময় আগলে রাখতেন। তাঁর সান্নিধ্যে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করতাম।”

ডেনিসের হাত ধরেই মারি পরিচিত হন ‘লাভস রক’ ঘরানার সঙ্গে। এই ঘরানাটি ছিল ব্রিটিশ রেগে সঙ্গীতের একটি কোমল ও রোমান্টিক রূপ।

মারি পিয়েরের ‘লাভ অ্যাফেয়ার’ অ্যালবামটি আজও এই ধারার অন্যতম সেরা কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অ্যালবামের গানগুলোতে প্রেম, বিরহ এবং সম্পর্কের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

**ব্যক্তিগত জীবন ও বাধা**

মারি পিয়েরের ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল অনেক দুঃখ। তাঁর স্বামী সিডের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়, যা তাঁকে গভীরভাবে আঘাত করে।

সংগীত জীবনের বাইরেও মারি পিয়ের ১৯৮০-এর দশকে টেলিভিশন এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘ডেসমন্ডস’-এর থিম সং গেয়েছিলেন।

রবার্ট প্ল্যান্ট, ডোনা সামার এবং চাকা খানের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। রবার্ট প্ল্যান্টের সঙ্গে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একটি প্ল্যাটিনাম ডিস্ক পেয়েছিলেন।

কিন্তু সাফল্যের এই আলো ঝলমলে পথের মাঝেও, মারি পিয়েরকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

**নতুন করে পথচলার শুরু**

দীর্ঘদিন পর, মারি পিয়ের আবার নতুন করে পথচলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডেনিস বোভেলের সঙ্গে তাঁর আবার দেখা হয়েছে এবং তাঁরা একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন।

মারি পিয়ের জানিয়েছেন, তিনি নতুন গান তৈরি করছেন এবং খুব শীঘ্রই শ্রোতাদের জন্য নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবেন।

মারি পিয়েরের এই প্রত্যাবর্তন, সংগীতপ্রেমীদের জন্য একটি দারুণ খবর। তিনি প্রমাণ করেছেন, বাধা যতই আসুক, হার না মানা মানসিকতা থাকলে, ঘুরে দাঁড়ানো যায়।

মারি পিয়েরের এই নতুন যাত্রা, আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *