ঐতিহাসিক ফ্যাশন: মারিয়া আঁতোয়ানেত কীভাবে ফ্যাশনের রাণী হলেন?

ফ্যাশন দুনিয়ায় আজও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, মারিয়া আঁতোয়ানেত।

ফরাসি বিপ্লবের আগুনে যখন ফ্রান্স পুড়ছে, সেই অস্থির সময়েও এক নারীর ফ্যাশন সচেতনতা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি আর কেউ নন, ফ্রান্সের রানি মারিয়া আঁতোয়ানেত।

মৃত্যুর দুই শতাব্দীরও বেশি সময় পরেও, ফ্যাশন এবং সংস্কৃতির জগতে তাঁর প্রভাব আজও অমলিন। সম্প্রতি লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে (Victoria & Albert Museum) শুরু হয়েছে মারিয়া আঁতোয়ানেতকে নিয়ে এক বিশেষ প্রদর্শনী।

এই প্রদর্শনীতে রানির ব্যক্তিগত জীবন, পোশাক এবং ফ্যাশন সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

মারিয়া আঁতোয়ানেত (Marie Antoinette) ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর (18th century) এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর রুচি, পোশাক এবং স্টাইল (style)-এর কারণে তিনি পরিচিত ছিলেন।

তাঁর ফ্যাশন (fashion) সেন্স (sense) তৎকালীন সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধু তাই নয়, আজকের দিনের অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার এবং তারকারাও তাঁকে অনুসরণ করেন।

উদাহরণস্বরূপ, কাইলি জেনার (Kylie Jenner) থেকে শুরু করে মাইলি সাইরাস (Miley Cyrus)-এর মতো তারকারা বিভিন্ন সময়ে মারিয়া আঁতোয়ানেতের মতো পোশাক পরে ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন।

ফ্যাশন দুনিয়ায় জন গ্যালিয়ানো (John Galliano), কার্ল লেগারফেল্ড (Karl Lagerfeld)-এর মতো খ্যাতনামা ডিজাইনাররাও তাঁদের সৃষ্টিতে রানিকে উৎসর্গ করেছেন। রিহানার (Rihanna) ‘ফেন্টি এক্স পুমা’ (Fenty x Puma) কালেকশনেও আঁতোয়ানেতের প্রভাব দেখা যায়।

লন্ডনের (London) এই প্রদর্শনীতে রানির ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র, যেমন—অলঙ্কার, পোশাক, হাতের পাখা, এমনকি তাঁর ব্যবহৃত সুগন্ধীও (perfume) প্রদর্শন করা হচ্ছে।

১৭৯১ সালে ফ্রান্সে (France) পালিয়ে যাওয়ার সময় রানি যে মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়েছিলেন, তার কিছু অংশ এই প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো সবার সামনে আনা হয়েছে। এছাড়াও, তাঁর কারারুদ্ধ অবস্থার পোশাক এবং যে গিলোতিন (guillotine) দিয়ে তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল, তার ছবিও এখানে রয়েছে।

তবে মারিয়া আঁতোয়ানেতের জীবন সবসময় ফুলের মতো সুন্দর ছিল না। তিনি যখন রানি হন, তখন ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল।

তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ফ্যাশন সচেতনতা নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন (cartoon) তৈরি করা হতো, যা তাঁর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করে।

মারিয়া আঁতোয়ানেতের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাও। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সোফিয়া কোপোলার (Sofia Coppola) ‘মারিয়া আঁতোয়ানেত’ (Marie Antoinette) ছবিতে রানির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্রিস্টেন ডানস্ট (Kirsten Dunst)।

সিনেমাটি মারিয়া আঁতোয়ানেতের জীবনকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে, যা দর্শকদের মধ্যে তাঁকে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে।

ফ্যাশন সমালোচক এবং লেখক হান্না স্ট্রং-এর মতে, এই সিনেমায় পরিচালক মারিয়া আঁতোয়ানেতের জীবনের দুঃখ-কষ্টকে সহানুভূতি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ডিজাইনার জেরেমি স্কটও (Jeremy Scott) এই সিনেমা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাঁর মতে, সিনেমার দৃশ্যগুলো খুবই আকর্ষণীয় ছিল।

মারিয়া আঁতোয়ানেতের ফ্যাশন সচেতনতা এবং স্টাইল (style) আজও ফ্যাশন দুনিয়ায় দৃষ্টান্তস্বরূপ। তাঁর জীবন এবং ফ্যাশন (fashion) নিয়ে মানুষের আগ্রহ আজও কমেনি।

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের এই প্রদর্শনী সেই আগ্রহের প্রমাণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *