পেরুর সাহিত্যাকাশে শোকের ছায়া, প্রয়াত মারিও ভার্গাস ইয়োসা।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক এবং সাহিত্যে নোবেল জয়ী মারিও ভার্গাস ইয়োসার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ পেরু। ৮৯ বছর বয়সে এই বর্ষীয়ান লেখকের প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।
পেরু সরকার তাঁর স্মরণে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে, সরকারি ভবনগুলোতে অর্ধনমিত রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা। খবর অনুযায়ী, রবিবার পেরুর রাজধানী লিমায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ভার্গাস ইয়োসার প্রয়াণের খবর নিশ্চিত করে তাঁর ছেলে আলভারো ভার্গাস ইয়োসা সামাজিক মাধ্যমে জানান, তাঁর বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কোনো প্রকারpublic ceremony বা আনুষ্ঠানিকতা হবে না।
বিশ্বজুড়ে তাঁর অগণিত পাঠক, বন্ধু এবং স্বজনদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে আলভারো লেখেন, “আমরা সবাই শোকাহত, তবে আমরা এই ভেবে সান্ত্বনা পাচ্ছি যে তিনি দীর্ঘ, বর্ণময় এবং ফলপ্রসূ জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন এবং রেখে গিয়েছেন এক বিশাল সাহিত্যকর্ম, যা যুগে যুগে মানুষের মনে বেঁচে থাকবে।”
মারিও ভার্গাস ইয়োসা ছিলেন বিংশ শতাব্দীর লাতিন আমেরিকার সাহিত্য জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের (Gabriel García Márquez) মতো লেখকদের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে।
২০১০ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘এন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’, ‘ডেথ ইন দ্য আন্দেস’ এবং ‘দ্য ওয়ার অফ দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস।
* **সাহিত্য ও জীবনের যোগসূত্র**
১৯৩৬ সালে পেরুর আরেকুইপায় জন্ম নেওয়া ভার্গাস ইয়োসা তাঁর লেখায় প্রায়ই ব্যক্তিজীবন এবং পরিবারের কথা তুলে ধরেছেন।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য টাইম অফ দ্য হিরো’ (The Time of the Hero) মূলত লিমার একটি সামরিক একাডেমিতে কাটানো তাঁর কৈশোর জীবনের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে রচিত।
১৯৯০ সালে পেরুর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের স্মৃতি নিয়ে লেখা আত্মজীবনী ‘আ ফিশ ইন দ্য ওয়াটার’ (A Fish in the Water)। তাঁর সাহিত্যকর্মে দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে।
‘দ্য স্টোরিটেলার’ (The Storyteller) উপন্যাসে পেরুর আদিবাসী এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির সংঘাত অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
* **রাজনৈতিক জীবন এবং বিতর্ক**
শুধু সাহিত্যচর্চা নয়, মারিও ভার্গাস ইয়োসা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যুতেও সরব ছিলেন।
একসময় ফিদেল কাস্ত্রোর (Fidel Castro) কিউবান বিপ্লবের সমর্থক হলেও, পরবর্তীতে তিনি কাস্ত্রো সরকারের সমালোচনা করেন।
১৯৯০ সালে তিনি পেরুর রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সেই সময় তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, দেশকে অর্থনৈতিক সংকট এবং মাওবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহের হাত থেকে বাঁচানো।
যদিও নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, “আমি বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলাম…আমি সবসময়ই বলেছি, নির্বাচনে জয়ী হই বা না হই, আমি আমার সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে ফিরে যাব, রাজনীতিতে নয়।”
তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলোয়ার্তে (Dina Boluarte) তাঁকে ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পেরুভিয়ান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তাঁর মতে, ইয়োসার ‘মেধা ও বিশাল সাহিত্যকর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ (Christopher Landau) বলেছেন, “শুধুমাত্র পেরুর লেখক হিসেবে তাঁকে চিহ্নিত করাটা অবিচার হবে, কারণ তাঁর ভাবনা এবং আগ্রহ ছিল সর্বজনীন।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা