বিখ্যাত পপ-পাঙ্ক ব্যান্ড `Blink-182`-এর অন্যতম সদস্য, মার্ক হপাস, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিভাবে জীবনের নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছেন, সেই গল্পটাই যেন এক রূপকথার মতো। বেভারলি হিলসের বিশাল বাড়িতে বসে, নিজের জীবন আর ক্যান্সারের সঙ্গে তাঁর লড়াই নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
মার্ক হপাসের বাড়িটি যেন আধুনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৬২ সালে তৈরি হওয়া এই বাড়িটি অর্ধবৃত্তাকারে তৈরি, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি সুইমিং পুল। মজার বিষয় হল, পুলটির ডিজাইন অনেকটা মানুষের যৌনাঙ্গের মতো। হাসতে হাসতে হপাস নিজেই সে কথা বললেন।
পপ-পাঙ্ক সঙ্গীতের জগতে `Blink-182`-এর আগমন ছিল এক নতুন দিগন্তের সূচনা। গানের কথায়, সুরে, এমনকি তাঁদের পোশাক-আশাকেও ছিল এক ধরনের বিদ্রোহের ছোঁয়া। “What’s My Age Again?”-এর মতো গানে, নগ্ন হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় দৌড়ানো—এসবই ছিল তাঁদের ভিন্ন ধারার পরিচয়।
তবে, এই হাসিখুশি, মজা-করা মানুষটার জীবনেও ছিল গভীরতা। বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ, মানসিক অস্থিরতা—এসব কিছু যেন তাঁর ভেতরের মানুষটাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে গিয়ে, একসময় তিনি নিজেই যেন হারিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন।
অবশেষে, স্কেটবোর্ডিং এবং পাঙ্ক রক-এর জগতে আশ্রয় খুঁজে পান হপাস। সেখানে তিনি খুঁজে পান একদল বন্ধু, যারা তাঁকে আপন করে নেয়। “আমরা ছিলাম সমাজের চোখে ব্রাত্য, যাদের কেউ পাত্তা দিত না, সেইসব মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল আমাদের দল,”—বলেন হপাস।
কিন্তু নিয়তি বোধহয় অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিল। ২০২১ সালে, হপাসের শরীরে ধরা পড়ে বিরল প্রকৃতির ক্যান্সার। এরপর শুরু হয় তাঁর কঠিন লড়াই। কেমোথেরাপির যন্ত্রণা, শরীরের দুর্বলতা—সবকিছুকে জয় করে তিনি ফিরে এসেছেন আগের রূপে।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার সময়, পুরনো বন্ধু এবং ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থন ছিল তাঁর কাছে বিশাল এক অনুপ্রেরণা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও যারা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন, তাঁদের কথা শুনে তিনি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
ক্যান্সারমুক্ত হওয়ার পর, `Blink-182`-এর পুনর্মিলন হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে, তাঁরা কোচেলা উৎসবে পারফর্ম করেন, যেখানে তাঁদের গান শুনে মুগ্ধ হয় হাজারো শ্রোতা।
মার্ক হপাসের জীবন, পপ-পাঙ্ক সঙ্গীত এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই—এসব কিছু যেন এক সুতোয় গাঁথা। তাঁর এই গল্প, আমাদের সকলকে জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহস জোগায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian