মার্ক সিনোট: দুঃসাহসিক অভিযানে ভয় পান না, বরফের গভীরে!

মার্ক সিনট, যিনি দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য পরিচিত, সম্প্রতি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যেকার বিখ্যাত উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন। তার এই অভিযান শুধু একটি যাত্রা ছিল না, বরং হারিয়ে যাওয়া ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার জন ফ্রাঙ্কলিনের ১৮৪৫ সালের অভিযানের এক গভীর অনুসন্ধানের অংশ ছিল।

ফ্রাঙ্কলিনের দল বরফের মধ্যে আটকা পড়েছিল এবং তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল, তা আজও এক রহস্য।

মার্ক সিনট তার ৪৭ ফুটের ‘পোলার সান’ নামের নৌকায় করে যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রাপথে তিনিও ফ্রাঙ্কলিনের দলের মতোই কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।

বরফের মধ্যে আটকা পড়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ‘ইনটু দ্য আইস’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে আর্কটিকে তার দুঃসাহসিক অভিযানের বর্ণনা রয়েছে।

বর্তমানে সিনট ও তার পরিবার প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। ফরাসি পলিনেশিয়ার মার্কেসাস দ্বীপপুঞ্জের কাছে তাদের প্রথম গন্তব্য হিভা ওয়া-তে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

এই দ্বীপটি তাদের দীর্ঘ ২০ দিনের সমুদ্রযাত্রার প্রথম ধাপ। সিনটের এই অভিযানটি মূলত তার পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ভ্রমণের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।

তিনি এর আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের হয়ে ২০০৫ সালে জিম্মি চিন এবং আরও কয়েকজনের সঙ্গে পিটকের্ন দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন, যা ছিল তার সমুদ্রযাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতা।

ফ্রাঙ্কলিন অভিযানের রহস্য সম্পর্কে সিনট বলেন, “ফ্রাঙ্কলিনের ১২৯ জন নাবিকের কেউই ফিরে আসেননি। এমনকি ইনুইটদের (Inuit) বিবরণ অনুযায়ী, তারা বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

তাদের কাগজপত্র নাকি একটি পাথরের স্তূপের নিচে লুকানো ছিল। এই বিষয়গুলো আমাকে খুব আকৃষ্ট করে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “অভিযানকালে কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করার প্রশিক্ষণ ছিল। সম্ভবত, ফ্রান্সিস ক্রোজিয়ার নামের একজন দ্বিতীয় কমান্ডার জীবিত ছিলেন এবং তিনি নিশ্চয়ই সেই সময়ের ঘটনাগুলো লিখে রেখেছিলেন।

তাই, এই রহস্যের সমাধান আরও তথ্যের মাধ্যমে হতে পারে।”

সিনট মনে করেন, অভিযানে ঝুঁকি থাকে, তবে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঝুঁকি নেওয়া অপরিহার্য। তিনি জানান, একবার তিনি ‘লস্ট অন এভারেস্ট’ তথ্যচিত্রের শুটিংয়ের সময়ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন।

পর্বতারোহণে অভিজ্ঞ সিনট নতুন দিগন্ত উন্মোচনে বরাবরই আগ্রহী। তিনি বর্তমানে তার নৌকায়climbing gear রেখেছেন এবং ফরাসি পলিনেশিয়ার একটি দ্বীপে আরোহণ করার পরিকল্পনা করছেন।

তার মতে, “পৃথিবীর অনেক কিছুই এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।”

সিনট তার বর্তমান সমুদ্রযাত্রা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ শেষ করতে চান এবং ২০২৬ সালের মধ্যে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন।

তিনি ‘পোলার সান’-কে পরিবারের সদস্যের মতোই দেখেন এবং এটিকে সাথে নিয়েই ফিরে যেতে চান।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *