মার্লন উইলিয়ামস: মাওরি ভাষায় অ্যালবাম প্রকাশের ‘সাহস’ খুঁজে পাওয়া। নতুন একটি অ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত নিউজিল্যান্ডের (আওতিয়ারোয়া) শিল্পী মার্লন উইলিয়ামস।
তবে এই অ্যালবামটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ মাওরি ভাষায়। নিজের সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি, যা একইসাথে তার শিল্পী জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
মার্লন উইলিয়ামস-এর পূর্বপুরুষ মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনি জানান, ভাষার প্রতি আকর্ষণ থেকেই এই অ্যালবাম তৈরির ভাবনা আসে। কিন্তু কাজটি সহজ ছিল না।
তিনি বলেন, মাওরি ভাষায় অ্যালবাম তৈরি করতে গিয়ে দ্বিধা ও আত্ম-সন্দেহে ভুগছিলেন। অবশেষে, বহুদিনের প্রচেষ্টায় তিনি ‘তে হোয়ার তিওয়েকাওয়েকা’ (Te Whare Tīwekaweka) শিরোনামের অ্যালবামটি প্রকাশ করতে সক্ষম হন।
অ্যালবামটির শিরোনামের অর্থ হলো ‘অগোছালো ঘর’, যা সম্ভবত ভাষার প্রতি তার দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করে।
এই অ্যালবামের প্রেক্ষাপট শুধু একটি গানের অ্যালবাম তৈরি করা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিউজিল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট।
বর্তমানে, নিউজিল্যান্ডে মাওরি ভাষা এবং সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে বিতর্ক চলছে। দেশটির সরকার মাওরি ভাষার ব্যবহার সীমিত করার চেষ্টা করছে। মার্লন উইলিয়ামস মনে করেন, এমন একটি সময়ে এই অ্যালবাম প্রকাশ করাটা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি জানান, এই অ্যালবামের কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল এবং এটি তার ব্যক্তিগত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
অ্যালবামের কিছু গানে অন্য শিল্পীদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী লর্ড-এর সঙ্গে তার একটি দ্বৈত গান রয়েছে।
মার্লন জানান, লর্ডের উচ্চারণ খুবই সুন্দর। এছাড়াও, অ্যালবামটিতে একটি ‘কাপ্পা হাকা’ (kapa haka) কোয়ারের কণ্ঠ শোনা যাবে, যারা ঐতিহ্যবাহী মাওরি পরিবেশনা শিল্পীগোষ্ঠী।
মার্লন উইলিয়ামস-এর মতে, এই অ্যালবামটি তার শিকড়ের প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতির সংরক্ষণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “ভাষা হলো সংস্কৃতির আত্মা।” মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যালবামটি প্রকাশের কথা রয়েছে।
একইসঙ্গে, মার্লন উইলিয়ামস-এর জীবন ও এই অ্যালবাম তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রও মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রামাণ্যচিত্রটির নাম ‘মার্লন উইলিয়ামস: ঙ্গা আও ই রুয়া – টু ওয়ার্ল্ডস’ (Marlon Williams: Ngā Ao E Rua – Two Worlds)।
মার্লন উইলিয়ামস-এর এই প্রয়াস, বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা তাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান