একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি, যিনি বিবাহিত এবং সন্তান-সন্ততি নিয়ে সংসার করেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি কঠিন অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
দু’বছর আগে তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে স্বীকার করেন যে, তিনি পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন।
পর্নোগ্রাফি দেখা, যৌনকর্মীর সঙ্গে বার্তালাপ এবং অন্য নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাগুলো তিনি ঘটিয়েছেন।
এই কথাগুলো শোনার পর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্ত্রীর আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগে।
এরপর তাঁরা দু’জনেই কাউন্সেলিং-এর সাহায্য নেন।
সেখানে গোপনীয়তা, মিথ্যা বলা এবং নিজেকে অযোগ্য মনে করার মতো কিছু বিষয় উঠে আসে, যা তাঁর শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে তৈরি হয়েছিল।
যদিও তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়বদ্ধ।
দম্পতি হিসেবে তাঁরা একসঙ্গে কঠিন সময় পার করেছেন, সম্পর্কের উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছেন।
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে আগের মতো সম্পর্ক ফিরে আসছিল, বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছিল, এবং ভবিষ্যতের প্রতি তাঁরা আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে, তিনি রাস্তায় অন্য একজন নারীর দিকে তাকিয়েছিলেন, যা তাঁর স্ত্রীর মনে আবার আঘাত হানে।
প্রথমে তিনি মিথ্যা বলেছিলেন, কিন্তু পরে স্বীকার করতে বাধ্য হন।
পুরনো ক্ষতগুলো যেন আবারও জেগে ওঠে।
এই ঘটনার পর তাঁর স্ত্রী জানান, সন্তানদের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে, অর্থাৎ দু’বছর পর তিনি তাকে ছেড়ে চলে যাবেন, যদি না তিনি সত্যিই পরিবর্তিত হন।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ে তিনি কী করছেন, তা নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই, বরং তিনি নিজেকে রক্ষা করতে চান।
স্বামীর মনে এখন গভীর দুশ্চিন্তা—যদি তারা আরও দূরে চলে যায়!
এই পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন হলো: স্ত্রীর এই দূরত্বকে কি সম্মান জানানো উচিত, এবং পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে—এই বিশ্বাস রাখা উচিত?
নাকি, এখনই সম্পর্ক শেষ করে দেওয়া ভালো, যাতে তিনি একা থেকে নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন, এবং স্ত্রীকে আর কষ্ট না দেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে স্বামীর উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক।
কারণ, তিনি তাঁর সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করেছেন, এবং অনেক কষ্টের পর যখন সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল, তখনই তিনি আবার একই ভুল করেছেন।
এখন তাঁর স্ত্রীর নিজেকে রক্ষার জন্য দূরে সরে যাওয়াটা বোঝা যায়।
তাঁর অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে, এখন নিজের আচরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
অর্থাৎ, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সৎ থাকা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা জরুরি।
এখানে তিনি একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন।
তাঁর স্ত্রী চান তিনি পরিবর্তিত হোন, যাতে তিনি নিরাপদ বোধ করেন।
এই ক্ষেত্রে, স্ত্রীর কথা শোনা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার, কোনো ফলাফলের আশা না করে।
যদি স্ত্রী পরিবর্তন দেখতে পান, তাহলে হয়তো তিনি থাকবেন, আর না হলে, নাও থাকতে পারেন।
তবে, পরিবর্তনটা নিজের জন্য জরুরি—যাতে তিনি একজন ভালো জীবনসঙ্গী এবং মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
এছাড়াও, ব্যক্তিগত থেরাপির বাইরেও কিছু সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
যেমন, ‘সেক্স অ্যাডিক্টস অ্যানোনিমাস’-এর মতো কিছু সংগঠন রয়েছে, যেখানে এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যায়।
মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌনতা এবং সম্পর্কের বিষয়ে নিজের ধারণা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।
লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, বরং নিজের আচরণগুলো বুঝে সেগুলোর পরিবর্তনে মনোযোগ দিতে হবে।
এই বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানার জন্য কিছু বই সাহায্য করতে পারে।
যেমন, ‘আউট অফ দ্য ডগহাউস’ (Out of the Doghouse) বইটি বিশ্বাসঘাতকতার পরে কীভাবে বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এছাড়াও, ‘ইউর ব্রেইন অন পর্ন’ (Your Brain on Porn) বইটি কিছু বিশেষ আচরণের গভীরে যাওয়া এবং সেগুলোর পরিবর্তনের উপায় নিয়ে আলোচনা করে।
তবে মনে রাখতে হবে, বইগুলো থেরাপির বিকল্প নয়।
সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, সত্যিকারের পরিবর্তন আনাই এখানে প্রধান বিষয়।
নিজের সততা, সত্যনিষ্ঠা এবং সচেতনতার ওপর কাজ করাটা খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান