মহাকাশে কি আমরা একা? মঙ্গলের পাথর দেবে উত্তর?

মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান: নাসার পাঠানো পাথরের নমুনা আনবে নতুন দিগন্ত।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বহুদিনের স্বপ্ন, ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে বের করা। সেই লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, নাসা (NASA) তাদের পাঠানো ‘পারসিভারেন্স’ (Perseverance) রোভারের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের বুকে পাথর সংগ্রহ করছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই পাথরের নমুনাগুলি পৃথিবীতে এনে পরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো মিলতে পারে বহু প্রতীক্ষিত সেই উত্তর – মহাবিশ্বে আমরা কি একা?

মঙ্গল গ্রহের ‘জেজেরো ক্রেটার’ (Jezero Crater)-এ ২০২০ সাল থেকে অভিযান চালাচ্ছে পারসিভারেন্স।

এই রোভারটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলিকে বিশেষ টিউবে (tube) জমা করছে।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই ক্রেটারটি একসময় একটি বিশাল হ্রদের অংশ ছিল, যেখানে কোনো এককালে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।

যদি তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তা হবে মানব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।

নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নমুনাগুলি ২০৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।

এরপর অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে সেগুলির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে।

এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন, মঙ্গলের পাথরের মধ্যে কোনো জীবাশ্ম বা প্রাণের অস্তিত্বের চিহ্ন (biosignatures) আছে কিনা।

এই নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে, মঙ্গল গ্রহের বয়স, সেখানকার পরিবেশ এবং ভূতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কেও অনেক অজানা তথ্য জানা সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির (Arizona State University) অধ্যাপক মীনাক্ষী ওয়াধওয়া (Meenakshee Wadhwa) জানিয়েছেন, “এই মিশনের প্রতিটি নমুনা মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে।”

পারসিভারেন্স যে স্থানগুলো থেকে পাথর সংগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • ডেল্টা ফ্যান (Delta Fan): জেজেরো ক্রেটারের কাছে প্রাচীন একটি নদীর মোহনার কাছে থাকা পলিমাটির স্তর থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এখানে প্রাচীন কালের জৈব পদার্থের (organic matter) সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

  • ক্রেটার ফ্লোর (Crater Floor): ক্রেটারের একেবারে নিচের অংশ থেকে সংগৃহীত পাথরের নমুনাগুলি সেখানকার ভূ-গঠন এবং বয়স সম্পর্কে ধারণা দেবে।
  • “বাথটাব রিং” কার্বোনেট (Carbonate) নমুনা: এই অঞ্চলে কার্বোনেটের উপস্থিতি, যা পৃথিবীর অগভীর হ্রদে পাওয়া যায়, সেখানকার জলবায়ু এবং পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে।
  • চেয়াভা ফলস (Cheyava Falls) নমুনা: এই পাথরের মধ্যে এমন রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত একসময় সেখানকার জীবাণুগুলির শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হত।

এছাড়াও, এখানে জৈব অণুর (organic molecules) উপস্থিতি প্রাণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

  • ক্রেটার রিম (Crater Rim): সম্প্রতি, পারসিভারেন্স ক্রেটারের উপরের অংশ থেকে একটি নমুনা সংগ্রহ করেছে, যা সম্ভবত আগের নমুনাগুলির চেয়েও পুরনো।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে মঙ্গলের অতীত সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।

এর মাধ্যমে জানা যাবে, একসময় মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ কেমন ছিল, সেখানে প্রাণের উদ্ভব হয়েছিল কিনা, এবং যদি হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে তা বিলুপ্ত হলো।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (Caltech) ভূতত্ত্ববিদ কেন ফার্লি (Ken Farley)-এর মতে, এই নমুনাগুলি “মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।”

নাসার এই মিশন সফল হলে, তা শুধু মহাকাশ গবেষণার দিগন্তই প্রসারিত করবে না, বরং আমাদের পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *