ফ্রান্সের এই শহরে উত্তর আফ্রিকান খাবারের জাদু!

মার্সেই: উত্তর আফ্রিকার স্বাদের ফরাসি শহর

ফরাসি ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত মার্সেই শহরটি বর্তমানে খাদ্যরসিকদের কাছে এক বিশেষ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানে উত্তর আফ্রিকার রন্ধনশৈলীর এক দারুণ মিশ্রণ দেখা যায়, যা ফরাসি সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে এক নতুন স্বাদ সৃষ্টি করেছে।

আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কোর সংস্কৃতি থেকে আসা অভিবাসীরা এই শহরের খাদ্য সংস্কৃতিতে এনেছেন বৈচিত্র্য।

ফরাসি উপনিবেশের সময় উত্তর আফ্রিকার অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে মার্সেইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, স্বাধীনতা আন্দোলনেও অনেকে এখানে আশ্রয় নেন।

কালের পরিক্রমায়, এই অভিবাসীরা তাদের সংস্কৃতি ও রন্ধনশৈলীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন, যা মার্সেইয়ের খাদ্য জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

এই শহরের রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন প্রায়ই দেখা মেলে উত্তর আফ্রিকান নানা পদের। যেমন, ‘লে রিগোলস’ রেস্টুরেন্টের শেফ জোহান বারিশাস-এর তৈরি ‘ব্রিক’ বেশ জনপ্রিয়।

এটি অনেকটা আমাদের দেশের আলুর চপের মতো, তবে এর ভেতরের পুর ও মশলার স্বাদ উত্তর আফ্রিকার ঐতিহ্য বহন করে। এছাড়াও, ‘শেরিমে’, ‘কেফতেজি’র মতো পদগুলোও খাদ্যরসিকদের মন জয় করেছে।

তবে, মার্সেইয়ের এই খাদ্য-সংস্কৃতির পরিবর্তন শুধু রেস্টুরেন্টেই সীমাবদ্ধ নেই। এখানকার স্থানীয় বাজারেও উত্তর আফ্রিকার খাবারের উপকরণ ও স্বাদ পাওয়া যায়।

‘নয়াইলস’ নামক একটি এলাকায় গেলে মনে হবে যেন অন্য কোনো জগতে প্রবেশ করেছেন। এখানকার বাজারগুলোতে মশলার গন্ধে মুখরিত থাকে, যা রান্নার স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।

এখানকার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের জলপাই ও শুকনো ফল পাওয়া যায়, যা উত্তর আফ্রিকার রান্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এখানে আসা শেফ ও খাদ্যপ্রেমীরা তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছেন। তারা ঐতিহ্যবাহী রেসিপিগুলিকে নতুনভাবে পরিবেশন করছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

যেমন, ‘বিসত্রো বায়া’র শেফ ম্যাভা হোসিনি ফরাসি খাবার ‘শূ ফর্সি’-তে আলজেরীয় উপাদান ব্যবহার করেন। এছাড়াও, তিনি ক্রোয়েশিয়ান ‘আজভার’-এর সঙ্গে আলজেরীয় মশলার মিশ্রণ তৈরি করেন, যা খাবারের স্বাদকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

মার্সেইয়ের এই খাদ্য-সংস্কৃতি শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের খাবার পরিবেশন করে না, বরং এটি বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটায়।

এখানকার মানুষজন খাদ্যকে ভালোবাসেন এবং এর মাধ্যমে তারা একে অপরের সংস্কৃতিকে সম্মান জানান।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *