আলো ঝলমলে: মারশা পি জনসনের অজানা গল্প!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মার্শা পি. জনসন। রূপান্তরকামী এই নারী অধিকার কর্মী ছিলেন তাঁর সময়ের সাহসী এক দৃষ্টান্ত।

১৯৬৯ সালের স্টনওয়াল অভ্যুত্থানে তাঁর নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়, যা এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তাঁর প্রয়াণের বহু বছর পরেও, জনসনের আদর্শ ও আত্মত্যাগ আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জোগায়।

আসন্ন মে মাসে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জনসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী, যার নাম ‘মার্শা: দ্য জয় অ্যান্ড ডেফিয়েন্স অফ মার্শা পি. জনসন’। এই জীবনীতে লেখক ট্যুরমালাইন স্টনওয়াল ঘটনার বাইরেও জনসনের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।

একজন শিল্পী ও অধিকার কর্মী হিসেবে তিনি কীভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সেই বিষয়টিও এতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যান্ডি ওয়ারহোল এবং আর্থ, উইন্ড অ্যান্ড ফায়ারের মতো খ্যাতনামা শিল্পীরাও ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস।

স্টনওয়াল বিদ্রোহের দশ বছর পর মার্শা সেই রাতের স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “আমি অনেকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছি।

সে এক নিয়মিত ঘটনা ছিল আমাদের জীবনে। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখতাম, একদিন রাস্তায় হেঁটে বেড়াবো, আর পুলিশের ভয় থাকবে না। সেদিন যখন এলো, আমি আমার সেই স্বপ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম।

এই বিদ্রোহের মাধ্যমেই মার্শা তাঁর শক্তি ও সৌন্দর্যের বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হন। তিনি রূপান্তরিত হয়ে, হরমোন থেরাপি নিয়ে এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে সকলের কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনের অগ্রগতির সাথে সাথে, কেউ কেউ মার্শার অবদানকে খাটো করতে চেয়েছেন। ঐতিহাসিক ডেভিড কার্টার মনে করেন, যৌনকর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ, রূপান্তরকামীদের প্রতি ঘৃণা, এবং অক্ষমতা বিষয়ক ধারণা, এই বিষয়গুলো মার্শার অবদানকে আলোচনার বাইরে রাখার কারণ ছিল।

স্টনওয়ালের ঘটনার প্রাথমিক বিবরণীতেও তাঁর নাম সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

তবে, যারা মার্শার অবদানকে অস্বীকার করতে চেয়েছেন, তাদের সেই চেষ্টা সত্ত্বেও, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কাছে মার্শা আজও শ্রদ্ধার পাত্রী। তাঁর সাহস, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ তাঁদের কাছে অমূল্য।

মার্শার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, স্টনওয়ালের ঘটনার রাতে তিনি প্রথমে কিছুটা দেরিতে সেখানে পৌঁছেছিলেন। যদিও ঘটনার সঠিক সময় নিয়ে তাঁর কিছু স্মৃতিবিভ্রাট ছিল, কারণ তিনি সবসময় এটিকে একটি উৎসবের মতো মনে করতেন, তাঁর ভাষায় যা ছিল “জন্মদিনের পার্টি”।

তিনি মনে করতেন, পুলিশের আক্রমণের প্রতিবাদ জানাতেই সকলে একত্রিত হয়েছিলেন।

মার্শার জীবন ছিল সংগ্রামের, কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট। তিনি সমাজের চোখে প্রান্তিক হয়েও, নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন। তাঁর জীবনী সেই সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি, যা নতুন প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *