অবশেষে! মস্তিষ্কের পরীক্ষামূলক উদ্দীপনা, তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি?

**দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি: পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক উদ্দীপনার নতুন দিগন্ত**

দীর্ঘকাল ধরে চলা ব্যথার কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পরীক্ষামূলকভাবে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা প্রদানের একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of California, San Francisco – UCSF) একদল গবেষক এই পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় (chronic pain) আক্রান্ত রোগীদের জন্য নতুন আশা জাগিয়েছে।

এই গবেষণার মূল আকর্ষণ হলেন ৫৫ বছর বয়সী এডওয়ার্ড মাওয়েরি (Edward Mowery)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল আঞ্চলিক ব্যথা সিন্ড্রোম (Complex Regional Pain Syndrome – CRPS)-এ ভুগছিলেন। এই রোগের কারণে তাঁর পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা হতো, যা তাঁর দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল।

অস্ত্রোপচারের পর তাঁর এই সমস্যা শুরু হয়েছিল। প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধ, এমনকি মরফিন ও অন্যান্য শক্তিশালী ঔষধও তাঁর ব্যথা কমাতে ব্যর্থ হয়েছিল।

ড. প্রসাদ শিরভালকারের (Prasad Shirvalkar) নেতৃত্বে ইউসিএসএফ-এর গবেষকরা গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপনা (Deep Brain Stimulation – DBS) নামক একটি কৌশল ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠানো হয়, যা ব্যথার সংকেতকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

এটি অনেকটা মস্তিষ্কের ‘অ্যালার্ম সিস্টেম’-কে শান্ত করার মতো, যা অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে উঠলে অনবরত বাজতে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিবিএস পদ্ধতির মাধ্যমে মাওয়েরির ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির ফলে তাঁর জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এসেছে।

আগে যিনি সামান্য কাজ করতেও অক্ষম ছিলেন, এখন তিনি আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন এবং গিটার বাজাচ্ছেন। এই সাফল্যের ফলে গবেষকরা এখন এই পদ্ধতির আরও উন্নতি এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে কাজ করছেন।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ নির্ণয় করা এবং এর সঠিক চিকিৎসা খুঁজে বের করা কঠিন একটি কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশেও এই সমস্যা বাড়ছে, তবে সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। উন্নত বিশ্বে ব্যথানাশক ওষুধের সহজলভ্যতা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুতর হতে পারে। তাই, ডিবিএস-এর মতো নতুন এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাঁরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত করা সম্ভব হবে, যা ব্যথায় কাতর রোগীদের জন্য আরও কার্যকর হবে।

এই গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health – NIH) প্রায় ৭.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮২ কোটি টাকা) অর্থায়ন করেছে।

ড. শিরভালকার মনে করেন, এই গবেষণা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তিনি বলেন, “আমরা এখন বুঝতে পারছি, মস্তিষ্কের ভেতরেই ব্যথার মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। সেই চাবিকাঠি খুঁজে বের করে, আমরা রোগীদের কষ্ট লাঘব করতে পারব।”

এই গবেষণার ফল চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নতুন আশা জাগিয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন (CNN)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *