জাপানে ‘ম্যাচা’ চা-এর চাহিদা বাড়ছে, ঐতিহ্য ও বাণিজ্যের দ্বন্দ্ব। জাপানি সংস্কৃতিতে ‘ম্যাচা’ (Matcha) এক বিশেষ ধরনের সবুজ চা-এর কদর বহুদিনের।
ঐতিহ্যপূর্ণ চা-অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার আজও বিদ্যমান, যেখানে শান্তির পরিবেশে চা পানের একটি বিশেষ রীতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই ‘ম্যাচা’ চা-এর জনপ্রিয়তা যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
ল্যাতে, আইসক্রিম থেকে শুরু করে কেক ও চকোলেট—সবকিছুতেই এখন ম্যাচার ছোঁয়া। বিশ্বজুড়ে এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ঐতিহ্যবাহী চা-অনুষ্ঠান পালনকারীরা কিছুটা হলেও চিন্তিত।
তাদের মনে প্রশ্ন, এই নতুন উন্মাদনা কি টিকবে, নাকি ম্যাচার সংস্কৃতিকে হালকা করে দেবে?
ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা।
জাপানি চা-অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষক কেইকো কানেকোর মতে, এই অনুষ্ঠান মানুষকে প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করতে শেখায়।
তার মতে, চা পরিবেশনের সময় যে শান্ত ও নিস্তব্ধ পরিবেশ বজায় থাকে, তা আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই কারণে ম্যাচার এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহার তাকে কিছুটা বিস্মিত করে।
চাহিদা বাড়ছে, জোগান সীমিত।
গত কয়েক বছরে ম্যাচা-এর চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে উন্নত মানের ম্যাচা-এর জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয় তাই চা চাষিদের ম্যাচা উৎপাদনে উৎসাহিত করতে চাইছে। তাদের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি, আর্থিক সহায়তা এবং পরামর্শের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের চা বিভাগের কর্মকর্তা তোমোইউকি কাওয়াই জানান, তারা চান ম্যাচা যেন একটি নির্দিষ্ট স্বাদের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ম্যাচা তৈরির মূল উপাদান ‘তেনচা’-এর উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
একই সময়ে জাপানের চা রপ্তানিও দ্বিগুণ হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রেই যায়। তবে বয়স্ক চাষিদের অবসরের কারণে ভবিষ্যতে ম্যাচা সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যান্য দেশগুলোও ম্যাচা উৎপাদনে ঝুঁকছে, তাই জাপান তাদের ব্র্যান্ড হিসেবে এই চায়ের উৎপত্তিস্থল হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রাখতে চাইছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
টোকিওর একটি চা দোকানের মালিক মিনোরু হান্দা মনে করেন, ম্যাচা-এর সবচেয়ে বড় দিক হলো এর বহুমুখী ব্যবহার। চা পাতার মতো এটি শুধুমাত্র পান করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও উপভোগ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ দুটোই ম্যাচার চাহিদার বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। তার দোকানে ম্যাচা কিনতে আসা গ্রাহকদের সংখ্যাও বাড়ছে, যদিও সরবরাহ সীমিত রাখতে তিনি প্রত্যেককে একটির বেশি ক্যান বিক্রি করেন না।
অন্যদিকে, ‘গ্লোবাল জাপানিজ টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-পরিচালক আনা পইয়ান মনে করেন, ল্যাটের মতো খাবারে নিম্নমানের ম্যাচা ব্যবহার করা উচিত, কারণ ভালো মানের ম্যাচা অল্প পরিমাণে ব্যবহার করলে তার আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের জন্য সুযোগ?
জাপানে ম্যাচা-এর এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের দেশেও এখন বিভিন্ন ধরনের চা-এর কদর বাড়ছে।
ম্যাচা বিষয়ক পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ম্যাচা চাষের সম্ভাবনাও বিবেচনা করা যেতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস