ম্যাক্স রোমিও: এক কিংবদন্তীর প্রয়াণ, শোকস্তব্ধ সঙ্গীত জগৎ!

কিংবদন্তি জ্যামাইকান রেগে শিল্পী ম্যাক্স রোমিও, যিনি তাঁর গভীর সামাজিক মন্তব্য এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে সারা বিশ্বে পরিচিত, ৮০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সঙ্গীতের জগতে তিনি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, বরং ছিলেন সমাজের অসঙ্গতি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক কণ্ঠস্বর।

তাঁর গানগুলি যুগে যুগে মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হবে।

ম্যাক্স রোমিও, যাঁর আসল নাম ম্যাক্সওয়েল স্মিথ, ১৯৪৪ সালে জ্যামাইকার একটি ছোট গ্রাম আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে তিনি বেড়ে ওঠেন।

মায়ের দেশত্যাগের পর বাবার কাছে থাকতে ১০ বছর বয়সে তিনি কিংস্টনে আসেন। এরপর সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায় এবং তিনি গান গাওয়া শুরু করেন।

১৯৬০-এর দশকে তিনি “দি ইমোশনস” নামক একটি গানের দলের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। তাঁদের “আই’ল বাই ইউ আ রেইনবো” গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সঙ্গীত জগতে তাঁর আসল পরিচিতি আসে ১৯৭০-এর দশকে, যখন তিনি “ওয়ার ইন বাবিলন” এবং “চেজ দ্য ডেভিল” এর মতো গানগুলি গেয়েছিলেন। এই গানগুলি জ্যামাইকার সামাজিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক বিভাজনকে তুলে ধরেছিল।

“চেজ দ্য ডেভিল” গানটি শয়তানকে মহাকাশে বিতাড়িত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে লেখা হয়েছিল, যা আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।

তাঁর গানের কথার গভীরতা এবং সুরের মাধুর্য তাঁকে দ্রুত খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়।

ম্যাক্স রোমিও শুধু জ্যামাইকাতে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী যেমন রোলিং স্টোনসের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তাঁর “ওয়েট ড্রিম” গানটি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।

১৯৮০-এর দশকে তিনি লন্ডনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যা তাঁর খ্যাতি আরও বাড়িয়ে তোলে। পরবর্তীকালে, তিনি জ্যামাইকার গ্রামাঞ্চলে একটি রেকর্ডিং স্টুডিও খোলেন, যেখানে তিনি তরুণ শিল্পীদের গান তৈরিতে সহায়তা করেন।

তাঁর কন্যা এবং পুত্রও এই স্টুডিওতে সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন।

সঙ্গীতের পাশাপাশি ম্যাক্স রোমিও রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়গুলির প্রতিও সচেতন ছিলেন। তিনি ১৯৭০-এর দশকে মাইকেল ম্যানলি নেতৃত্বাধীন বামপন্থী পিপলস ন্যাশনাল পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

কিন্তু, পরিবর্তনের ধীর গতি দেখে তিনি সমালোচনা করতেও পিছপা হননি।

জীবনের শেষ বছরগুলোতেও তিনি সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ৫৬টি শহরে কনসার্ট করেন।

মৃত্যুর কিছু দিন আগে তিনি তাঁর গান থেকে প্রাপ্য রয়্যালটি আদায়ের জন্য ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ ও পলিগ্রাম পাবলিশিং-এর বিরুদ্ধে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মামলা করেন।

ম্যাক্স রোমিও ছিলেন একজন চিন্তাশীল, প্রজ্ঞাবান এবং হাস্যরসিক মানুষ। সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছেন।

তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীত জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাঁর স্ত্রী চার্ম এবং পরিবারের সদস্যরা তাঁর স্মৃতি বহন করে চলবেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *