মে দিবস: শ্রমিক অধিকার ও অভিবাসন ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১লা মে) টোকিও থেকে শিকাগো পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে শ্রমিক সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই দিবসটি পালন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে, এই বছর মে দিবসের সমাবেশগুলোতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, শ্রমিকদের অধিকার হরণ, এবং বিভিন্ন বৈষম্যমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর শোনা যাবে। শিকাগোর প্রবীণ শ্রমিক নেতা জর্জ মুজিকা বলেন, “বর্তমানে সবাই আক্রমণের শিকার।”
মে দিবসের ইতিহাস এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো। উনিশ শতকের আটের দশকে, শ্রমিকরা কর্মপরিবেশের উন্নতির দাবিতে আট ঘণ্টা কাজের দিনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৮৬ সালের মে মাসে, শিকাগোতে শ্রমিকদের এক সমাবেশে বোমা হামলায় কয়েকজন নিহত হলে পুলিশ গুলি চালায়।
এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন অভিবাসী। পরে শ্রমিকদের সম্মান জানাতে প্রতি বছর ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিকাগোর হে মার্কেটে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে লেখা আছে, “বিশ্বের সকল শ্রমিকের প্রতি উৎসর্গীকৃত।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মে দিবসের মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভে শ্রমিক অধিকার, অর্থনৈতিক সংকট এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। যদিও অধিকাংশ সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল, কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
গত বছর প্যারিসে শ্রমিকরা ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের দাবিতে মিছিল করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। নিউইয়র্ক শহরে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে মে দিবসের সমাবেশ মিলিত হওয়ায় সেখানেও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বছর নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের আয়োজকরা বিভিন্ন ইস্যু ও গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এমন একটি পৃথিবীর জন্য সংগঠিত হচ্ছি, যেখানে প্রতিটি পরিবারের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা থাকবে—জাতি, অভিবাসন স্ট্যাটাস বা এলাকার ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই।”
যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশের মধ্যে রয়েছে ফিলাডেলফিয়া সিটি হলে শ্রমিক সমাবেশ, যেখানে ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স উপস্থিত থাকবেন। কলোরাডো স্টেট ক্যাপিটল, লস অ্যাঞ্জেলেস, সিয়াটল এবং ওয়াশিংটন ডিসিতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।
ঐতিহাসিকভাবে শ্রমিক অধিকার ও অভিবাসন একসঙ্গে জড়িত। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ, যার মধ্যে শিকাগোতে প্রায় পাঁচ লাখ, অভিবাসন আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল। এই আইনটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা ছিল।
মে দিবসের সমাবেশে জনসমাগম বর্তমানে কিছুটা কম হলেও, শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। শিকাগোর আয়োজকরা জানিয়েছেন, তারা মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত শ্রমিক অধিকার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবেন।
বিশ্বের অনেক দেশে, যেমন ফ্রান্স, কেনিয়া, রাশিয়া ও চীন, মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে এর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের উদযাপন দেখা যায়। যেমন, হাওয়াইয়ে ১লা মে “লেই ডে” পালন করা হয়, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও “আলোহা” চেতনার প্রতি সম্মান জানানো হয়।
এছাড়াও, অনেকে বন্ধু ও প্রিয়জনদের বাড়িতে ফুল ও উপহারের ঝুড়ি পৌঁছে দেন। মেরিল্যান্ডের আনাপোলিস শহরে মে দিবস উপলক্ষে সেরা ফুলের আয়োজনের জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আনাপোলিসের মেয়র গ্যাভিন বাকলি বলেন, “এটি আমাদের সম্প্রদায়ের শীত বিদায় এবং বসন্তের সৌন্দর্য ও শক্তিকে স্বাগত জানানোর একটি উপায়।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস