বেলজিয়াম ভ্রমণে যারা কোলাহলমুক্ত, শান্ত পরিবেশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য হতে পারে মেখলেন শহর। ব্রাসেলস থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ, ইউরোস্টারের মতো দ্রুতগতির ট্রেনে চেপে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়।
গেন্ট বা ব্রুজের মতো জনপ্রিয় শহরগুলোর ভিড় এড়িয়ে, মেখলেনে আপনি পাবেন ঐতিহাসিক স্থাপত্য, আকর্ষণীয় সংস্কৃতি আর স্থানীয় জীবনের স্বাদ।
মেখলেনের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ১৬ শতকে এই শহরটি ছিল নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ-এর মিলিত অঞ্চলের রাজধানী।
এখানকার সেন্ট রম্বাল্ড ক্যাথেড্রাল-এর ঘণ্টাঘরটি (বেলফ্রি) ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। যারা উঁচু থেকে শহরের দৃশ্য দেখতে ভালোবাসেন, তারা এর চূড়ায় উঠে চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
ক্যাথেড্রালের ভেতরে রয়েছে বারোক স্থাপত্যের নিদর্শন, যেমন ক্রুশবিদ্ধ যিশুর একটি চিত্রকর্ম ও লুকাস ফেইডহার্বের তৈরি করা একটি কোয়ার।
ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হফ ভ্যান বুসলেইডেন জাদুঘর। একসময় এখানে প্রিন্স, সম্রাট ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা আসতেন।
জাদুঘরে ফ্লেমিশ শিল্পকলার নিদর্শন, যেমন—প্রাচীনকালের মূল্যবান চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়াও, পুরনো একটি মঠকে আধুনিক রূপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘হেট প্রedডিকহেরে’ নামের একটি লাইব্রেরি।
এখানে নিয়মিতভাবে শিল্প প্রদর্শনী, নাচ ও গানের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
যারা ভোজনরসিক, তাদের জন্য মেখলেনে রয়েছে দারুণ সব খাবারের আয়োজন। এখানকার ‘টিনেল’ নামের একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে ফ্লেমিশ শেফ কেন ভার্সুরেন-এর তৈরি মুখরোচক খাবার উপভোগ করা যায়।
এছাড়া, গ্র্যান্ড বেগুইনেজ-এর কাছে অবস্থিত ‘হেট অ্যাঙ্কার’ নামের একটি পারিবারিক ব্রুয়ারি ও ডিস্টলারিতে নানা ধরনের বিয়ার ও হুইস্কির স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
এখানকার রেস্টুরেন্টে পরিবেশিত হয় স্থানীয় বিশেষ খাবার, যেমন—গাউডেন ক্যারোলাস বিয়ার দিয়ে তৈরি গরুর মাংসের স্ট্যু এবং স্থানীয় উপাদানে রান্না করা অন্যান্য সুস্বাদু পদ।
আবাসনের জন্য মার্টিন’স প্যাটারশফ-এর মতো আকর্ষণীয় হোটেলে থাকার সুযোগ রয়েছে, যা এক সময়ের একটি গির্জা ছিল।
এর ভেতরে পুরনো দিনের রঙিন কাঁচের জানালা এবং খিলানগুলি এখনো বর্তমান।
শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গ্রোট মার্কেট-এ শনিবার বসে বাজার। এখানে স্থানীয় পনির, স্মোকড সসেজ, চিংড়ি ও ঝিনুক পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ১৯ শতকের পুরনো একটি কসাইখানা ‘ভিলেশল’-কে আধুনিক ফুড মার্কেটে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়।
ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেখলেনে রয়েছে গভীর শোকের প্রতিচ্ছবি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি, জিপসি ও সমকামীদের বন্দী করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর জন্য এখানকার ক্যাসারে ডোসিন-কে ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর, যেখানে যুদ্ধের সময়কার নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তারা ডাইল নদীর ধারে হেঁটে বেড়াতে পারেন। এছাড়া, ক্রুইডটুইন নামের একটি পার্কে রয়েছে সুন্দর বাগান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছ দেখা যায়।
গ্রীষ্মকালে এখানে প্রায়ই কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
মেখলেন, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে যারা ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য বেলজিয়ামের একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান