মেডিকেইড ও খাদ্য সহায্যে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের প্রতিক্রিয়া!

যুক্তরাষ্ট্রের জনমত: সরকারি ব্যয়ের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকানরা। ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন সরকার স্বাস্থ্যখাত এবং খাদ্য সহায়তা সহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ খরচ করছে না।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ’-এর জরিপে উঠে এসেছে, দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।

সমীক্ষায় জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মসূচি, যেমন—সোশ্যাল সিকিউরিটি ও মেডিকেয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বর্তমানের মতোই অর্থ বরাদ্দ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে সামরিক ব্যয় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে।

এছাড়া, অধিকাংশ আমেরিকান মনে করেন, সরকার বৈদেশিক সাহায্য খাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নআয়ের মানুষ ও কিছু বিশেষ শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য মেডিকেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মসূচি। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৪৯%) জানিয়েছেন, মেডিকেয়ারে খুব সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।

খাদ্য সহায়তা প্রকল্পেও, যেমন— খাদ্য স্ট্যাম্প বা ‘স্ন্যাপ’-এর মতো কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয় না বলে মনে করেন ৪৫ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, এই দুটি খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয় বলে মনে করেন ৩০ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান দলের সদস্যদের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয় বলে ধারণা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাদের ৪৬ শতাংশ এমনটা মনে করেন।

যেখানে ডেমোক্রেট ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে এই সংখ্যাটা খুবই কম, প্রায় ১০ শতাংশ। মেডিকেয়ারের ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন সরকার এখানে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে।

সোশ্যাল সিকিউরিটি, মেডিকেয়ার এবং শিক্ষাখাতেও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয় না বলে মনে করেন অনেক আমেরিকান। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ দেয় না।

তবে ডেমোক্রেটরা মনে করেন, এই খাতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

সামরিক খাতে ব্যয়ের বিষয়ে আমেরিকানদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার সামরিক খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে, আবার একই সংখ্যক মানুষ মনে করেন, বরাদ্দকৃত অর্থ যথেষ্ট নয়।

এছাড়া, প্রায় ৪০ শতাংশ মনে করেন, সরকার সামরিক খাতে সঠিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আগের তুলনায় রিপাবলিকানদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। জানুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ মনে করতেন সীমান্ত নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হয় না।

নতুন জরিপে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটদের মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের ধারণা বেড়েছে। জানুয়ারিতে যেখানে ৩০ শতাংশ ডেমোক্রেট এমনটা মনে করতেন, সেখানে এখন প্রায় ৫০ শতাংশ একই ধারণা পোষণ করেন।

বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে একটি বড় অংশের ধারণা, সরকার অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে। ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার অন্যান্য দেশে সাহায্যের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে।

এই জরিপটি গত ৫ থেকে ৯ই জুন পর্যন্ত ১,১৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর চালানো হয়। জরিপের মার্জিন অফ স্যাম্পলিং এরর বা নমুনা ত্রুটি ছিল প্লাস বা মাইনাস ৪ শতাংশ।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *