১ ট্রিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্যখাতে কোপ: কাদের জীবনে নামবে অন্ধকার?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা বিষয়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (প্রতিনিধি পরিষদ)। রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই পরিষদে প্রস্তাবিত এই সিদ্ধান্তের ফলে কয়েক কোটি আমেরিকান নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেডিকেইড এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি—উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার (১ লক্ষ কোটি) কাটার প্রস্তাব করা হয়েছে। মেডিকেইড হলো দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি সহায়তা প্রকল্প, যেখানে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম বা সংক্ষেপে ‘স্ন্যাপ’) দরিদ্রদের খাদ্য কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়।

প্রস্তাবটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের কয়েক কোটি মানুষের ওপর। রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো, যারা কাজ করতে সক্ষম, তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফল আরো ব্যাপক হতে পারে এবং এতে শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্ক নাগরিকসহ সমাজের দুর্বল শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বর্তমানে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৭ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মেডিকেইড এবং ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী। এই কাটছাঁটের ফলে অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোর ওপরও অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে। তাদের হয় স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা খাতে বরাদ্দ কমাতে হবে, না হয় অন্য উন্নয়নমূলক খাতে অর্থ কমিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এমনকি কোনো কোনো রাজ্যে করের বোঝা বাড়ানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনের মধ্যে মেডিকেইড সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, ১৯ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সুবিধাভোগীদের প্রতি মাসে ন্যূনতম ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। কর্মসংস্থান না করতে পারলে, সমাজসেবামূলক কাজ, শিক্ষা গ্রহণ অথবা কোনো প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এই শর্ত পূরণ করতে হবে। তবে গর্ভবতী নারী, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি এবং মাদকাসক্তদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

অন্যদিকে, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগীদের জন্য নতুন কিছু নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী এবং যাদের সন্তান রয়েছে, এমন বাবা-মাকে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়াও, রাজ্য সরকারগুলোর খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে অর্থ যোগানের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে খাদ্য সহায়তা পাওয়া থেকে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ বঞ্চিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত মুদি দোকানদাররা সতর্ক করে বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ স্থানীয় অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হারানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন নজিরবিহীন কাটছাঁটের ফলে রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং সুবিধাভোগী—সবার জন্যই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমানে, বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে বিতর্ক চলছে। চূড়ান্ত বিল পাস হওয়ার আগে এতে আরো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *