মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি সরকারি বীমা প্রকল্প হলো ‘মেডিকেয়ার’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা স্বাস্থ্যখাতে কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে, সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা ‘মেডিকেয়ার’-এর আওতাভুক্ত নয়।
এই সীমাবদ্ধতাগুলো জানা থাকলে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকল্পনা করা সহজ হয়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ‘মেডিকেয়ার’-এর অধীনে কোন কোন স্বাস্থ্য পরিষেবা সাধারণত পাওয়া যায় না।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সমাধানে সাধারণত চশমা বা লেন্স ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। ‘মেডিকেয়ার’-এর প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের চিকিৎসার এই দিকটি অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক যদি চোখে লেন্স বসানোর পরামর্শ দেন, সেক্ষেত্রে ‘মেডিকেয়ার’ কিছু খরচ বহন করে।
এছাড়া, যদি আপনার চোখের ছানির অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে এবং আপনি ‘মেডিকেয়ার’-এর পার্ট বি-এর অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমযুক্ত একটি চশমা অথবা এক সেট কন্টাক্ট লেন্স পেতে পারেন।
শ্রবণ ক্ষমতার সমস্যা সমাধানে শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র বা হিয়ারিং এইড-এর প্রয়োজন হয়। ‘মেডিকেয়ার’-এর আওতায় শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র এবং শ্রবণ পরীক্ষার খরচ সাধারণত পাওয়া যায় না। তবে, কোনো চিকিৎসক যদি আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শ্রবণ ও ভারসাম্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, সেক্ষেত্রে ‘মেডিকেয়ার’-এর পার্ট বি-এর অধীনে কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
দন্ত চিকিৎসা বা দাঁতের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবাও ‘মেডিকেয়ার’-এর আওতাভুক্ত নয়। যেমন— দাঁত তোলা, ফিলিং করা, অথবা ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্টের মতো চিকিৎসা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, যদি কোনো কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দাঁতের চিকিৎসা করাতে হয়, সেক্ষেত্রে ‘মেডিকেয়ার’ কিছু সহায়তা করতে পারে।
এছাড়াও, পায়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু চিকিৎসা, যেমন— পায়ের আঘাত বা বিকৃতি, ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেগুলোর চিকিৎসার খরচ ‘মেডিকেয়ার’-এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। তবে, সাধারণ পায়ের চিকিৎসার খরচ এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিও ‘মেডিকেয়ার’-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, ‘মেডিকেয়ার’-এর পার্ট বি-তে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে ১২ মাস অতিবাহিত হলে, আপনি বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পেতে পারেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে কোনো রোগ দেখা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।
সৌন্দর্য বিষয়ক অস্ত্রোপচার সাধারণত ‘মেডিকেয়ার’-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, কোনো দুর্ঘটনা অথবা শরীরের কোনো বিকৃতি সারানোর জন্য অস্ত্রোপচার করতে হলে, সেক্ষেত্রে ‘মেডিকেয়ার’-এর সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য চিরপ্র্যাকটিক সেবা ‘মেডিকেয়ার’-এর অন্তর্ভুক্ত।
তবে, এই সংক্রান্ত অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ এর মধ্যে পড়ে না। সাধারণ ম্যাসাজ থেরাপি এবং আকুপাংচার পরিষেবাও ‘মেডিকেয়ার’-এর আওতাভুক্ত নয়। দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যসেবা, যা সাধারণত অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন হয়, সেটিও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়।
সাধারণত, ‘মেডিকেয়ার’ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা দেয় না। তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। যেমন— জরুরি অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশে চিকিৎসা নিতে গেলে, সেই খরচ ‘মেডিকেয়ার’-এর মাধ্যমে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবার এই দিকগুলো ‘মেডিকেয়ার’-এর মাধ্যমে কভার করা না হলেও, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ‘মেডিকেয়ার’-এর বাইরেও স্বাস্থ্য বীমার বিভিন্ন সুযোগ বিদ্যমান।
বাংলাদেশে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় আর্থিক দুশ্চিন্তা পোহাতে না হয়। আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজন অনুযায়ী, বিভিন্ন বীমা এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা ভালো।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন
