মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলছে, যা ‘মেডিকেয়ার’-এর বেসরকারীকরণ নিয়ে। এই বিষয়টি সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হলেও, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সরকারি স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে আলোচনা হয়, তারই একটি অংশ এটি.
আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই মেডিকেয়ার কী, কেনই বা এর বেসরকারীকরণের কথা উঠছে, এবং এর ভালো-মন্দ দিকগুলো কী কী।
মেডিকেয়ার হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিক এবং কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যার শিকার ব্যক্তিদের জন্য একটি ফেডারেল স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি, বহির্বিভাগের চিকিৎসা, এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো কভার করা হয়।
বর্তমানে, মেডিকেয়ার মূলত সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হয়। তবে, এখানে একটি বিষয় আছে। এই প্রকল্পের অধীনে, রোগীরা চাইলে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধের খরচ পাওয়ার জন্য বীমা কিনতে পারেন।
বেসরকারীকরণ বলতে সাধারণভাবে বোঝানো হয়, সরকারি মালিকানা থেকে কোনো কিছুকে ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে যাওয়া। মেডিকেয়ারের বেসরকারীকরণ হলে, এর অর্থ হবে—সরকারের পরিবর্তে বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলো এই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করবে।
বর্তমানে, মেডিকেয়ারের অধীনে ‘মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ’ নামে একটি বিকল্প ব্যবস্থা চালু আছে। এই পদ্ধতিতে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো মেডিকেয়ারের সুবিধাগুলো সরবরাহ করে। অনেক সময়, এই কোম্পানিগুলো মূল মেডিকেয়ারের বাইরে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে, যেমন—চোখের চিকিৎসা, দাঁতের চিকিৎসা, এবং শ্রবণ সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে প্রায় ৩ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ-এর সুবিধা গ্রহণ করছেন, যা মেডিকেয়ারের সুবিধাভোগীদের প্রায় ৫৪ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকেই অনেকে মনে করেন, মেডিকেয়ার ধীরে ধীরে বেসরকারীকরণের দিকেই যাচ্ছে।
মেডিকেয়ারকে বেসরকারীকরণ করার কিছু সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে। যেমন, কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা কম খরচে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন।
মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ পরিকল্পনায় সাধারণত মূল মেডিকেয়ারের তুলনায় কম পরিমাণ ডিডাক্টিবল বা নিজস্ব খরচ হয়। তাছাড়া, এই ধরনের পরিকল্পনায় চোখের চিকিৎসা, দাঁতের চিকিৎসা, ইত্যাদি অতিরিক্ত সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও, এই ধরনের পরিকল্পনায় বছরে কত খরচ হবে, তার একটি সর্বোচ্চ সীমা (আউট-অফ-পকেট কস্ট) নির্ধারণ করা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালে এই সীমা ৯,৩৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, কোনো রোগীর চিকিৎসার খরচ যদি এই পরিমাণ অতিক্রম করে, তাহলে বীমা কোম্পানিই বাকিটা বহন করবে।
অন্যদিকে, মেডিকেয়ারের বেসরকারীকরণের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এর প্রধান একটি দিক হল—চিকিৎসক বা হাসপাতালের পছন্দ সীমিত হয়ে যাওয়া।
মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ-এর অধীনে, রোগীদের একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা ডাক্তারদের থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়। এর বাইরে গেলে, অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
তাছাড়া, অনেক সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হলে বা কিছু বিশেষ চিকিৎসার জন্য বীমা কোম্পানির পূর্ব অনুমোদন (প্রি-অথরাইজেশন) নিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ-এর অধীনে থাকা রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণগত মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে, যারা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং যাদের চিকিৎসার খরচ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে পরিষেবা পেতে সমস্যা হতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, রোগীরা মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ থেকে মূল মেডিকেয়ারে ফিরে যেতে চান। বিশেষ করে, যারা ব্যয়বহুল চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
এছাড়াও, কারো কারো ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সমস্যা হয় বা বীমা কোম্পানিগুলো তাদের চিকিৎসা খরচ দিতে অস্বীকার করে, এমন অভিযোগও শোনা যায়।
মেডিকেয়ারের বেসরকারীকরণ একটি জটিল বিষয়। এর ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং ভবিষ্যতে এর পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন এবং উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি যেকোনো দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন