শিরোনাম: মেডিটেরিয়ান ডায়েট: স্মৃতিভ্রংশতা কমাতে পারে, বলছে নতুন গবেষণা।
বর্তমান বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ, যার মধ্যে অন্যতম হলো স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্রIGHAM and Women’s Hospital’ এবং ‘Harvard Medical School’-এর গবেষকদের করা এই গবেষণাটি সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যভ্যাস অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
বিশেষ করে, যাদের শরীরে আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন একটি জিন (APOE4) রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ডায়েট অনুসরণ করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
গবেষণা অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যভ্যাস মূলত সবজি, ফল, শস্য, বাদাম, শিম ও মাছের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার সমৃদ্ধ। এই ধরনের খাবার গ্রহণ স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
এই খাদ্যাভ্যাস শরীরের মেটাবলিক ক্রিয়াকে উন্নত করে, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষক দলের প্রধান, ড. ইউক্সি লি-র মতে, এই ডায়েটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি রাখা, যা আমাদের দেশেও সহজলভ্য।
যেমন, টমেটো, শসা, বেগুন, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এবং মৌসুমী ফল নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যোগ করা যেতে পারে। মাছের মধ্যে ইলিশ, রুই, কাতলার মতো মাছ ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়া, বাদামের মধ্যে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চীনাবাদাম ইত্যাদিও খাদ্য তালিকায় যোগ করা যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যারা APOE4 জিন বহন করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ডায়েট আরো বেশি কার্যকর।
কারণ এই জিনের কারণে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে, শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেই নয়, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনেও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমেও এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
ফ্লোরিডার ‘Institute for Neurodegenerative Diseases’-এর গবেষক ড. রিচার্ড আইজ্যাকসন মনে করেন, এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কারণ, আগে ধারণা করা হতো, APOE4 জিন থাকলে ডিমেনশিয়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু এই গবেষণা সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি জীবনযাত্রার অন্যান্য পরিবর্তনগুলো ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আরেকটি বিষয় হলো, এই গবেষণাটি হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে, যেখানে ৫,৭০০ জনের বেশি মানুষের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
তবে, মনে রাখতে হবে, এটি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা।
কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন