মেঘ জোনস: ইংল্যান্ডের নারী রাগবি তারকার শোক ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
খেলাধুলার জগতে সাফল্যের শিখরে ওঠা সবসময়ই কঠিন। কিন্তু সেই সাফল্যের পথে ব্যক্তিগত শোক আর কষ্টের পাহাড় ডিঙানো আরও কঠিন। ইংল্যান্ডের নারী রাগবি দলের খেলোয়াড় মেগ জোনসের জীবন তেমনই এক কঠিন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।
মাঠে তার দক্ষতার ঝলকানির পাশাপাশি, পরিবারের শোক আর মাতৃত্বের হারানোর বেদনা নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন।
মেগ জোনস ইংল্যান্ডের রাগবি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সেন্টার পজিশনে খেলা এই তারকার রাগবি জীবনের শুরুটা হয় ২০১৫ সালে, যখন তার বয়স ছিল মাত্র আঠারো বছর। বর্তমানে তিনি দলের ভাইস-ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাঠের খেলায় তিনি যেমন পারদর্শী, তেমনই নেতৃত্বগুণেও অনন্য। তার নেতৃত্ব প্রদানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহানুভূতি এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা।
জোনসের জীবন এক বছরের ব্যবধানে দুটি বড় আঘাত হানে। প্রথমে তার বাবা, ওয়েলসের নাগরিক সাইমন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং পরে মারা যান। এরপর, তার মা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল আসক্তিতে ভুগছিলেন, তিনিও মারা যান।
এই শোকের সময়ে জোনসকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হয়েছে, যা তার জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন।
বাবা সাইমন ছিলেন পেশায় একজন সামান্য কর্মী। খেলাধুলার প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা। তিনি মেয়েকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতেন।
মেয়ের খেলা দেখতে প্রায়ই মাঠে যেতেন। বাবার মৃত্যুর পর জোনস জানান, বাবার শেষ দুটি ইচ্ছের একটি ছিল, তিনি যেন মেয়েকে প্যারিস অলিম্পিকে সেভেন্স খেলতে দেখেন।
মায়ের অসুস্থতা জোনসের জন্য ছিল এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। জোনসের মা ছিলেন একজন সিনিয়র নার্স।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিউরো ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। মায়ের অ্যালকোহল আসক্তি জোনসকে গভীর হতাশায় ফেলেছিল। তিনি মায়ের চিকিৎসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি।
মায়ের মৃত্যুর পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
এই কঠিন সময়ে জোনসকে সাহস জুগিয়েছেন তার বান্ধবী সেলিয়া কুয়ান্সাহ। সেলিয়াও একজন রাগবি খেলোয়াড় এবং টোকিও অলিম্পিকে সেভেন্স দলে খেলেছিলেন।
খেলার মাঠে এবং মাঠের বাইরে, সেলিয়া সবসময় জোনসের পাশে ছিলেন।
শোক কাটিয়ে জোনস আবার ফিরে এসেছেন মাঠে। আসন্ন সিক্স নেশনস টুর্নামেন্টের জন্য তিনি প্রস্তুত হচ্ছেন।
জোনস মনে করেন, খেলাধুলা তাকে শোকের গভীরতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “আমি জানি, প্রিয়জনদের বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে, তোমরা তাদের ভালোবাসো এবং তাদের পাশে আছো।”
বর্তমানে জোনস তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তিনি খেলাধুলায় মনোনিবেশ করেছেন এবং ইংল্যান্ডের হয়ে আরও ভালো খেলতে চান।
তিনি চান, তার খেলা দেখে নারীদের রাগবি খেলার প্রতি আরও বেশি মানুষের আগ্রহ জন্মাবে। জোনস এখন নিজের একটি পরিবার শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন। তার জীবনে এখন আশা আর আলো ঝলমল করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান