মেগালোডন: দাঁতের বিশ্লেষণ বদলে দিল পুরনো ধারণা, এবার কী খাবে জানা গেল?

বিশাল আকারের বিলুপ্তপ্রায় মেগালোডন হাঙরের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রচলিত ধারণা বদলে দিয়েছে নতুন এক গবেষণা। এতদিন মনে করা হতো, এই দানব হাঙর প্রধানত তিমি ও বড় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করত।

কিন্তু জীবাশ্ম দাঁতের বিশ্লেষণ সেই ধারণায় পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেগালোডন হয়তো সুযোগসন্ধানী শিকারী ছিল, খাদ্যের চাহিদা মেটাতে তারা ছোট প্রাণীও খেত।

জার্মানির গোয়েথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক জেরেমি ম্যাককর্ম্যাকের মতে, “মেগালোডন যখন বড় শিকার পেত, তখন হয়তো সেগুলোই খেত।

কিন্তু যখন তা সহজলভ্য ছিল না, তখন খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ছোট আকারের প্রাণী শিকার করতেও তাদের দ্বিধা ছিল না।”

সম্প্রতি ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দাঁতের মধ্যে থাকা জিঙ্ক বা দস্তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জিঙ্ক হলো এমন একটি খনিজ যা খাদ্য থেকে আসে। হাঙরের দাঁতের এনামেলের মধ্যে জিঙ্কের আইসোটোপের অনুপাত থেকে তারা খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেগালোডন হাঙর খাদ্যের জন্য শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রাণীর উপর নির্ভরশীল ছিল না। তারা স্থানীয় পরিবেশে যা পেত, তাই খেত।

অর্থাৎ, তারা খাদ্য শৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরের প্রাণী শিকার করত। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই হাঙর সম্ভবত অন্যান্য বৃহৎ শিকারী এবং ছোট আকারের প্রাণী—উভয়কেই ভক্ষণ করত।

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলের একটি চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই অনুযায়ী, প্রথমে ছিল শামুক ও ক্রাস্টাসিয়ান জাতীয় প্রাণী—যারা সমুদ্রের তলদেশে বাস করত।

এর পরে ছিল ছোট আকারের হাঙ্গর প্রজাতি (যেমন: Carcharhinus)। এরপর বিলুপ্তপ্রায় দাঁতওয়ালা তিমি এবং সবশেষে ছিল মেগালোডন।

গবেষকরা বলছেন, মেগালোডন খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে থাকলেও, এর খাদ্যাভ্যাসে ভিন্নতা ছিল।

তারা একই সময়ে বসবাসকারী অন্যান্য বৃহৎ শিকারী যেমন—ওটোডাস চুবুটেনসিস এবং অ্যারালোসেলাকাস কাস্পিডাটাস-এর সাথে খাদ্য ভাগাভাগি করত। এই বিষয়টি প্রমাণ করে যে, মেগালোডন একচ্ছত্রভাবে সমুদ্রের শাসক ছিল না।

এই গবেষণাটি মেগালোডনের জীবন এবং বিলুপ্তি সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৃহত্তর সাদা হাঙরের আবির্ভাব মেগালোডনের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে।

সাদা হাঙর আকারে ছোট হলেও, তাদের শিকার করার ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল। এছাড়া তারা দ্রুতগতিতে চলাফেরা করতে পারত, যা তাদের শিকারের সুবিধা দিত।

এই গবেষণার মাধ্যমে প্রায় ২০ মিলিয়ন বছর আগের সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেগালোডনের দাঁতগুলো ছিল প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার (৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা।

তারা ধারণা করছেন, এই হাঙরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ মিটার (৮০ ফুট) পর্যন্ত হতে পারত।

নতুন এই গবেষণা মেগালোডন সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণাগুলো আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতে আরও গবেষণা এই বিষয়ে আলোকপাত করবে এবং হয়তো মেগালোডনের সম্পূর্ণ কঙ্কাল আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *