শিরোনাম: রাজপরিবারের অন্দরের বিবাদ: প্রিন্সেস শার্লটের পোশাক বিতর্কে কেঁদেছিলেন মেগান ও কেট?
২০১৮ সালে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের আসরে রাজপরিবারের দুই সদস্যের মধ্যেকার একটি ঘটনা আবারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ঘটনাটি হলো, কনেপক্ষের একজন হিসেবে প্রিন্সেস শার্লটের পোশাক নিয়ে কেট মিডলটন এবং মেগান মার্কেলের মধ্যে মতবিরোধ।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন জীবনীতে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার জেরে কেঁদেছিলেন মেগান ও কেট দুজনেই।
বিয়েতে প্রিন্সেস শার্লটের পোশাকের মাপ নিয়ে সমস্যা ছিল, এমনটাই জানা যায়।
ডিউক ও ডাচেস অফ সাসেক্সের বিয়ের পরে খবর রটেছিল, শার্লটের পোশাকের মাপ নিয়ে দুই জা’য়ের মধ্যে বচসা হয় এবং এর জেরে কেট কেঁদেছিলেন। যদিও ২০২১ সালে অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মেগান জানিয়েছিলেন, আসল ঘটনাটি ছিল ঠিক এর উল্টো।
তাঁর কথায়, তিনিই নাকি কেঁদেছিলেন।
টম কুইনের লেখা ‘ইয়েস, ম্যাম: দ্য সিক্রেট লাইফ অফ রয়্যাল সার্ভেন্টস’ নামক একটি নতুন জীবনীতে এই ঘটনা নতুন করে সামনে এসেছে।
বইটিতে রাজপরিবারের এক কর্মীর বয়ান উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মেগান ও কেটের মধ্যেকার বিতর্কের কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা নিউজউইক-কে ওই কর্মী জানিয়েছেন, “আমি বলতে পারি, সংবাদমাধ্যম এবং মন্তব্যকারীরা এই বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে।
সত্যি বলতে, দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া হলে যা হয়, এখানেও তাই হয়েছিল। দুই পক্ষই খুব upset ছিল।”
ওই কর্মীর ভাষ্যমতে, “অনুষ্ঠান চলাকালীন পোশাক নিয়ে আলোচনার সময় মেগান এমন কিছু কথা বলেছিলেন যা তাঁর পরে খারাপ লেগেছিল।
আবার কেটও এমন কিছু কথা বলেছিলেন যা তাঁর বলতে ভালো লাগেনি।
তবে, সে সব কথা ছিল মুহূর্তের উত্তেজনার ফল।
দুজনেই খুব কেঁদেছিলেন।”
জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া বিয়েতে প্রিন্সেস শার্লটের সাদা পোশাকের মাপ নিয়ে সমস্যা ছিল।
বিয়ের আগে এই বিষয়টি নিয়ে বেশ চাপ তৈরি হয়েছিল বলে অনেকে জানিয়েছেন।
ডেইলি টেলিগ্রাফের রাজপরিবার বিষয়ক অভিজ্ঞ সাংবাদিক ক্যামিলা টমিনিকে একটি সূত্র জানায়, “কেট তখন সবে প্রিন্স লুইকে জন্ম দিয়েছেন, তাই তিনি বেশ আবেগপ্রবণ ছিলেন।”
তবে, অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মেগান জানান, “বিয়েটা ছিল খুবই কঠিন একটা সপ্তাহ।”
তিনি আরও বলেন, কেট কিছু একটা নিয়ে upset ছিলেন, পরে তিনি বিষয়টি স্বীকারও করেন।
মেগান জানান, কেট ক্ষমা চেয়ে ফুল ও একটি নোট পাঠিয়েছিলেন।
মেগান বলেন, “আমার মনে হয়, তাঁর বিস্তারিত বলাটা ঠিক হবে না, কারণ তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
মেগানের মতে, বিয়ের কয়েক মাস পর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসায় তিনি অবাক হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি চাইনি, তাঁর সম্পর্কে এমন কিছু কখনো প্রকাশ হোক, যদিও ঘটনাটি ঘটেছিল।”
প্রিন্স হ্যারি তাঁর আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’-এ এই ঘটনা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন।
তাঁর মতে, বিয়ের চার দিন আগে কেট একটি টেক্সট মেসেজে জানান, ‘শার্লটের পোশাকটা বড়, লম্বা ও ঢিলেঢালা। সে এটা পরে কাঁদতে শুরু করে।’
বইটিতে আরও জানা যায়, মেগান নাকি কেটকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, পোশাকের মাপ ঠিক করার জন্য কেনসিংটন প্যালেসে উপস্থিত দর্জির সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
কিন্তু কেট নাকি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘সব পোশাক নতুন করে তৈরি করতে হবে।’
বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুই জা’য়ের মধ্যে টেক্সট মেসেজে কথা কাটাকাটির পর হ্যারি বাড়ি ফিরে মেগানকে কাঁদতে দেখেন।
হ্যারি বলেন, “আমি তাকে এত upset অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এটাকে আমি কোনো বিপর্যয় হিসেবে দেখিনি।”
হ্যারি আরও জানান, পরের দিন কেট ফুল ও একটি কার্ড নিয়ে এসে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
২০২৩ সালে হ্যারির বই প্রকাশের পর, ব্রাইডাল পোশাক তৈরীর দায়িত্বে থাকা দর্জি অজয় মিরপুরি ডেইলি মেইলকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
তিনি জানান, মেগান ও কেটের মধ্যে কোনো ঝগড়া তিনি দেখেননি।
মিরপুরি বলেন, “যদি কিছু হয়েও থাকে, তবে তা আমার সামনে হয়নি।
তবে, বিয়েতে চাপ থাকে, সেটা আমি বুঝি।
বিশেষ করে যখন বিষয়টি এত উঁচু স্তরের হয়।
পোশাকের মাপ নিয়ে কারও মন খারাপ হতেই পারে।
বাচ্চাদের যদি ill-fitting পোশাক পরানো হয়, তবে তা খুবই উদ্বেগের।”
তিনি আরও জানান, তাঁদের দল ছয় জন ব্রাইডমেইডের পোশাক ঠিক করার জন্য চার দিন ধরে কাজ করেছিলেন।
বিয়ের আগের রাতে তাঁরা রাত ১০টা পর্যন্ত উইন্ডসর ক্যাসেলে ছিলেন।
এই ঘটনার বাইরেও মেগান ও কেটের মধ্যে মতের অমিল হওয়ার আরও কিছু ঘটনার কথা শোনা যায়।
এমনকি তাঁদের প্রথম সাক্ষাতেও নাকি তাঁদের মধ্যে বনিবনা হয়নি।
নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজে মেগান জানান, কেট ও প্রিন্স উইলিয়ামের মধ্যেকার আনুষ্ঠানিকতা দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন।
ওমিড স্কোবি তাঁর ২০২৩ সালের বই ‘এন্ডগেম’-এ লিখেছেন, শুরু থেকেই কেট ও মেগানের মধ্যে খুব কম বিষয়ে মিল ছিল।
বইটিতে আরও বলা হয়েছে, তাঁদের স্বামীর মধ্যেকার বিবাদ তাঁদের সম্পর্কের শুরুতে কোনো সাহায্য করেনি।
এই ঘটনার সূত্র ধরে রাজপরিবারের অন্দরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা চলছে।
তথ্যসূত্র: পিপলস ম্যাগাজিন