**প্যারিস ফ্যাশন উইকে আলো ছড়ালেন মেগান মার্কেল ও অ্যান হ্যাথওয়ে, বালেন্সিয়াগার নতুন সংগ্রহে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণ**
প্যারিস, ফ্রান্স – প্যারিস ফ্যাশন উইকের মঞ্চে আবারও এক ঝলমলে আয়োজন। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বালেন্সিয়াগা ফ্যাশন হাউজের নতুন সংগ্রহ। শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই ফ্যাশন শো’তে একদিকে যেমন ছিল ফ্যাশনের চিরায়ত ঐতিহ্য, তেমনই দেখা গেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আর এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাচেস অফ সাসেক্স মেগান মার্কেল এবং অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথওয়ের মতো তারকারা।
ঐতিহ্যপূর্ণ এক প্রেক্ষাপটে এই শো’টির আয়োজন করা হয়েছিল। বালেন্সিয়াগার মালিকানার অংশ, কেরিং-এর ঐতিহাসিক ল্যানেক সদর দপ্তরে অবস্থিত একটি চ্যাপেলে এই শো অনুষ্ঠিত হয়।
এই স্থানটি গত কয়েক মাস আগেও বালেন্সিয়াগার প্রাক্তন ডিজাইনার দেমনার একটি রেট্রোস্পেক্টিভের সাক্ষী ছিল।
নতুন এই কালেকশনের ডিজাইন করেছেন পিয়েরপাওলো পিকোলো। যিনি জুলাই মাস থেকে প্যারিস-ভিত্তিক এই বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।
নিজের কাজের মাধ্যমে অতীতের প্রতি সম্মান জানানো এবং সেই ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন পিকোলো।
ফ্যাশন সমালোচকদের মতে, পিকোলোর ডিজাইনগুলো মানবিক, সহানুভূতিপূর্ণ এবং সদয়—এই বৈশিষ্ট্যগুলোই তাকে ফ্যাশন জগতে একজন রোমান্টিক ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত করেছে।
নতুন সংগ্রহে পুরনো দিনের ডিজাইনগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, যা বালেন্সিয়াগার ঐতিহ্যকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
শো’টিতে জনপ্রিয় সব ডিজাইন যেমন ‘সিটি’ এবং ‘রোডিও’ ব্যাগগুলির নতুন সংস্করণ দেখা গেছে। এছাড়াও ছিল বালেন্সিয়াগার লোগো সম্বলিত নতুন বাউলার ব্যাগ।
চামড়ার জ্যাকেট এবং অভিনব কিছু টপস-এর ডিজাইনও ছিল, যেখানে একদিকে যেমন ছিল খোলামেলা পোশাকের ছোঁয়া, তেমনই দেমনার ডিজাইন করা পোশাকের কিছু বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা গেছে।
পিকোলো জানিয়েছেন, “আমি দেমনার কাজকে গ্রহণ করতে চেয়েছি এবং সংস্কৃতি ও রাস্তার ফ্যাশনের মধ্যে একটি সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “অতীতে যা হয়েছে, তাকে অস্বীকার করাটা অসম্মানজনক এবং বোকামি।
যখন আপনি একটি নতুন ফ্যাশন হাউজ পরিচালনা করেন, তখন আপনার পূর্বসূরিদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। তাই আমি দেমনার ডিজাইনগুলোর আদলে কাজ করতে চেয়েছি, তবে আমার নিজস্ব রুচি ও শৈলী বজায় রেখেছি।”
নতুন এই সংগ্রহে ভায়োলেট, সায়ান ও হাইলাইটার ইয়েলোর মতো উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।
ফ্যাশন জগতে পিকোলোর উজ্জ্বল রঙের প্রতি ভালোবাসা সকলেরই জানা।
বালেন্সিয়াগার প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোবাল বালেন্সিয়াগা নারীদের পোশাকের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতেন। তিনি পোশাকের মাধ্যমে নারীদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতেন, যা এই ফ্যাশন হাউজের একটি বিশেষত্ব।
গ্রেস কেলি এবং অড্রে হেপবার্নের মতো স্টাইলিশ নারীদের পোশাক ডিজাইন করেছেন বালেন্সিয়াগা। পিকোলোও সেই ধারা বজায় রেখেছেন।
পিকোলো তার ডিজাইনগুলোতে কাপড়ের গুণগত মানের উপর জোর দিয়েছেন।
তিনি ব্যবহার করেছেন গাজার (gazar) নামক এক ধরনের সিল্ক বা উলের কাপড়, যা ১৯৫৮ সালে সুইস টেক্সটাইল কোম্পানি আব্রাহামের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বালেন্সিয়াগা তৈরি করেন।
পিকোলোর মতে, এই কাপড়টি “দুটি সুতা দিয়ে তৈরি”, যা পোশাককে হালকা রাখে এবং পরতে আরামদায়ক করে।
তবে, বালেন্সিয়াগা বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে মন্দা এবং লাভজনকতা কমে যাওয়ার কারণে এর মালিক কেরিং-এর জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুকা ডি মেও-এর উপর এখন এই সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব। ফ্যাশন বোদ্ধারা মনে করছেন, পিকোলোর মতো একজন প্রতিভাবান ডিজাইনারকে নিয়োগ করা এক্ষেত্রে একটি ভালো পদক্ষেপ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন