নদীতে ভ্রমণের সুবর্ণ সুযোগ! কেন ক্রুজ লাইনগুলো ঝুঁকছে?

মেকং নদীর বুকে নৌবিহার: ইতিহাস আর সংস্কৃতির এক অনন্য অভিজ্ঞতা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভ্রমণে আগ্রহী ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য মেকং নদীর বুকে নৌবিহার একটি অসাধারণ সুযোগ হতে পারে। একদিকে যেমন ইতিহাসের সাক্ষী থাকা যায়, তেমনই উপভোগ করা যায় এই অঞ্চলের সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

সম্প্রতি, ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে এই নৌবিহারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাই বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন।

মেকং নদী: যেখানে মিশেছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য

মেকং নদী, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বুক চিরে বয়ে গেছে, এই অঞ্চলের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির বুক চিরে বয়ে চলা এই নদীর তীরে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান। এখানকার ক্রুজে ভ্রমণকালে পর্যটকেরা যেমন একদিকে কম্বোডিয়ার ‘খ্‌মের রুজ’ শাসনকালের গণহত্যার স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শন করতে পারেন, তেমনই ভিয়েতনামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

নৌবিহারের আকর্ষণ

মেকং নদীর নৌবিহার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা নতুন নতুন জাহাজ তৈরি করছে এবং পুরনো জাহাজের সংস্কার করছে।

রুডি স্ক্রেইনার, যিনি ‘আমাওয়াটারওয়েজ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, তারা সব সময় নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন।

উদাহরণস্বরূপ, তারা ভিয়েতনামের ‘ট্রা সু কাইজাপুট’ বনভূমিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন, যেখানে ৭০টিরও বেশি পাখির প্রজাতি দেখা যায়। তাছাড়া, নৌকায় করে এখানকার জলপথে ঘুরে বেড়ানোটাও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা।

ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়

নদীর এই অংশে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলো যখন নৌযান চলাচল সহজ থাকে।

বিশেষ করে কম্বোডিয়ার দিকে যাওয়ার সময় নদীর দৃশ্য খুবই শান্ত ও মনোরম থাকে। মেকং নদীর উপরের অংশে, যা লাওস এবং থাইল্যান্ডের সীমান্ত ঘেঁষে গেছে, সেখানেও ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।

‘মেকং কিংডম’ এবং ‘হেরিটেজ লাইন’-এর মতো সংস্থাগুলো এই রুটে বিলাসবহুল নৌবিহারের আয়োজন করে থাকে।

কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

কম্বোডিয়ার সিয়েম রিপ-এ অবস্থিত আংকর ওয়াট মন্দিরটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

এখানে নতুন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি হওয়ায় ভ্রমণ আরও সহজ হয়েছে। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতেও নৌবিহারের সুযোগ রয়েছে।

ভ্রমণ সংস্থা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা

বর্তমানে, বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা মেকং নদীতে নৌবিহারের আয়োজন করে থাকে।

এদের মধ্যে ‘আমাওয়াটারওয়েজ’, ‘একোয়া এক্সপেডিশনস’, ‘ভাইকিং’, ‘ইউনিওর্ल्ड বুটিক রিভার ক্রুজ’, ‘প্যান্ডাও ক্রুজ’-এর নাম উল্লেখযোগ্য। এই সংস্থাগুলোর বিলাসবহুল জাহাজে চড়ে ভ্রমণকারীরা আধুনিক সব সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য কিছু পরামর্শ

যদি আপনি মেকং নদীতে নৌবিহারে যেতে চান, তাহলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারেন।

  • ভিসা: কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস এবং থাইল্যান্ডে যেতে ভিসার প্রয়োজন হবে। ভ্রমণের আগে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন.
  • ভিসা প্রক্রিয়াকরণ: ভ্রমণের আগে ভিসার জন্য আবেদন করুন.
  • বিমান টিকিট: ঢাকা থেকে ব্যাংকক, হ্যানয় অথবা হো চি মিন সিটির সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে.
  • খরচ: এই নৌবিহারের খরচ বিভিন্ন প্যাকেজের ওপর নির্ভর করে.
  • খাবার: জাহাজে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে, আপনি চাইলে হালাল খাবারের জন্য আগে থেকে অনুরোধ করতে পারেন।

সুতরাং, যারা ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির এক চমৎকার মিশ্রণ উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য মেকং নদীর নৌবিহার একটি আদর্শ ভ্রমণ হতে পারে।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *